মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যাঃ প্রাসঙ্গিক ভাবনা

ড.আবদুল আলীম তালুকদার
 
  অষ্টম শতাব্দী থেকে মিয়ানমারের (বার্মা) আরাকান (রাখাইন) প্রদেশে আরব, মোগল, তুর্কি, পর্তুগিজসহ বিদেশি বণিক ও সৈন্যবসতি স্থাপন করে। পনের শতকের দিকে এই বসতির বেশির ভাগ অধিবাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি গড়ে তোলে; এরাই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। রোহিঙ্গারা পশ্চিম মিয়ানমারের (ব্রহ্মদেশ) আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের উত্তরাংশে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠী এবং এ রাজ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে তাদের বসবাস। মিয়ানমারের সরকারি হিসেব মতে, প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা আরাকানে বসবাস করে। রোহিঙ্গা আদিবাসিরা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর একটি।
     ঐতিহাসিক সূত্রে প্রমাণিত যে, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরব বণিক ও ধর্মপ্রচারকগণ নৌপথে আরাকানে এসে ধর্মপ্রচার ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে সেখানকার উপকূলীয় অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। প্রথম মুসলিম জনবসতি হিসেবে আরব ফার্সি, ইউরোপীয় এবং চীনা পর্যটকদের রেকর্ডে নথিভুক্ত করা হয় নবম শতাব্দীতে। বর্মি মুসলিম ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকদের অনেকে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন এবং ঔপনিবেশিকরা অনেক মুসলমানকে বার্মায় যুদ্ধবন্ধী ও দাস হিসেবে নিয়ে আসে। মান্দালয়ের উদারমনা রাজা বার্মায় আগত চীনা মুসলমানদের রাজধানী মান্দালয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করার অনুমতি দেন এবং এ মসজিদে ইউনান সুলতান সুলায়মান অনুদান দিতে সম্মত হন। তার অর্থায়নে ১৮৬৮ খ্রি. মসজিদ প্রকল্প শুরু হয়।  গণচীনের ক্রনিকলস রেকর্ড অনুযায়ী ফার্সি মুসলিমরা ৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইউনান চীনা অঞ্চলের সীমান্তবর্তী উত্তর বার্মায় আগমন করেন। বর্মি মুসলমানদের মধ্যে পাথাই বলা হয় যাদের, তারা থাইল্যান্ডের কাছাকাছি দক্ষিণাঞ্চলে অনেক মুসলিম জনবসতি গড়ে তোলেন।
     ৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে একদল আরব বণিক সমুদ্রে নৌকাডুবির কারণে আরাকানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আরাকান রাজা মা-ব-তাং তাদের আচরণে মুগ্ধ হয়ে বসবাসের জন্য কয়েকটি গ্রাম ছেড়ে দেন। নবম শতাব্দীর আরব ভূগোলবিদ ইবনে খুরদাদবিহ (৮২০-৯১২ খ্রি.) ভারতের পূর্বে সমন্দর, আওরনাশীন ও আবীনা নামে ৩টি অঞ্চলের নাম উল্লেখ করেছেন। যা ইতিহাসবিদ ও গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন এ ৩টি অঞ্চল বলতে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, আরাকান ও বার্মা অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে। তাই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত যে, আরাকানে মুসলমানগণ খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে আরব দেশ হতে এসে এখানে স্থায়ী বসবাস করেন এবং তথায় তখনকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। চট্টগ্রাম ও আরাকান একই ইউনিট হিসেবে দীর্ঘদিন শাসনের ফলে চট্টগ্রামে আগত আরব মুসলিমগণ আরাকানে গিয়ে স্থায়ী বসবাস করেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি আলাওল ১৬০৭ খ্রি. হতে ১৬৮০ খ্রি. পর্যন্ত আরাকানে অবস্থানকালে যেসব মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর লোক দেখতে পেয়েছিলেন তারা হলেন : আরবি, মিশরি, সামী, হাবশী, রুমী, খোরাসানী, উজবেকী, লাহোরী, মুলতানী, সিন্ধী, কাশ্মিরী, কামরুপী, বঙ্গদেশী, কর্ণাটকী, মালয়, আচেহ প্রভৃতি। পর্তুগীজ লেখক গুয়েবিরো ও মানুচী তাদের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থে আরাকানে মিশ্র জনগোষ্ঠীর মুসলিম সম্প্রদায় অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। মোঘল স¤্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সূজা ভ্রাতৃযুদ্ধে পরাজিত হয়ে অনুচরসহ আরাকানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আরাকানের রাজা ধন-সম্পদ ও মণি-মানিক্যের লোভে শাহ সূজাকে হত্যা করলেও তার সঙ্গে আগত সহযাত্রী মুসলিমগণ আরাকানে রয়ে যান। এভাবে অষ্টম শতাব্দীর প্রারম্ভ থেকে বিভিন্ন সময় আরাকান অঞ্চলে মিশ্র জাতি গোষ্ঠীর মুসলিম সম্প্রদায় বসবাস করেন; তারাই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নামে পরিচিত।
    ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪৩০ খ্রি. থেকে ১৭৮৪ খ্রি. পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। রাজা নারামেখলা(১৪৩০-১৪৩৪) স্বাধীন রাজা হিসেবে রাজ্য পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বাংলার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আরাকানে বাংলার ইসলামী মুদ্রা চালু করেন। তার প্রবর্তিত মদ্রার একপাশে ছিল বার্মিজ বর্ণ এবং অপরপাশে ছিল ফার্সি বর্ণ। ১৪৩৩ খ্রি. সুলতান জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহের মৃত্যু হলে স¤্রাট নারামেখলার উত্তরাধিকারীরা ১৪৩৭ খ্রি. রামু এবং ১৪৫৯ খ্রি. চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। ১৬৬৬ খ্রি. পর্যন্ত চট্টগ্রাম আরাকানের অধীনস্থ ছিল। বার্মিজ রাজা বোদাওফায়া আরাকান (রাখাইন) রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়।
    মিয়ানমার সরকার কোনকালেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বর্তমান সরকার সে দেশের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, রোহিঙ্গারা এই তালিকার অন্তর্ভূক্ত নয়। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে মিয়ানমার সরকার যে সামরিক আইন জারি করেছে তাতে ৩ ধরণের নাগরিকের কথা বলা হয়েছে। এই তিন শ্রেণির মধ্যেও নেই রোহিঙ্গারা। সরকারিভাবে তাদের সেখানে অবৈধভাবে বসবাসকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিজ দেশে পরবাসী তারা। তাদের কোন ভোটাধিকার নেই সে দেশে। নেই কোন প্রকার সামাজিক ও সাংবিধানিক অধিকার। রোহিঙ্গারা কোন ভূমি বা স্থায়ী সম্পত্তির মালিক হতে পারে না, সরকারি চাকুরী করার কোন অধিকার তাদের নেই, সরকারি কোন দপ্তরে কোন প্রকার সেবা তারা পায় না, ব্যাংকে লেনদেন করতে পারে না, সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের সেবা গ্রহণ করতে পারে না, উপযোগ সেবার (বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানী) জন্য আবেদন করতে পারে না, স্ব-পরিচয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। ভ্রমণ, বিয়ে, সন্তানসহ নানা বিষয়ে তাদের ওপর আরোপ করা হয় কড়াকড়ি আইন। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়, প্রায়শ: স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন লোকালয়ে বিনা কারণে হানা দিয়ে তাদের অযথা হয়রানি করে। এলাকার সৌন্দর্য্য বর্ধন, সরকারি জমি অধিগ্রহণের নামে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের অনেকগুলো মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাচীন কয়েকটি মসজিদও রয়েছে। শিক্ষার আলো এবং স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। নিজ এলাকার বাইরে ভ্রমণে বিধি-নিষেধ থাকায় অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নেওয়া বিরাট একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের। ২০০১ সাল থেকে আরাকানের আকিয়াব বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের লেখাপড়ার সুযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়। ফলে তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। 
    আরাকানের এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপরে বার্মার সৈন্যদের আক্রমণ খুবই সাধারণ ঘটনা। ১৭৮৫ সালে ৩০ হাজার বার্মিজ সেনা আরাকান আক্রমণ করে মসজিদ ও বিভিন্ন স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে ২ লাখ রোহিঙ্গাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। এমনকি এ সময় রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারার ঘটনাও ঘটে। তাদের এই আক্রমণের কারণে ১৮২৫ খ্রি. ব্রিটিশদের স্বাগত জানায় রোহিঙ্গারা। ব্রিটিশ শাসনে নিজেদের অবস্থান অনুকূলে থাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোহিঙ্গারা ব্রিটিশদের অনুকুলে থাকে। পরবর্তীতে এজন্য তাদের চরম মূল্যও দিতে হয়। ১৯৪২ খ্রি. ঘটে যায় সবচেয়ে  নৃশংস রোহিঙ্গা গণহত্যা। সেখানকার রাখাইন মগদের হাতে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়। এই গণহত্যায় বিলুপ্ত হয় ৩০৭টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম। কালাদান নদীর পুর্ব তীরে যা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা তা হয়ে ওঠে সংখ্যা লঘু এলাকা। পরবর্তী সময় গ্রেট ব্রিটেন আবার দখল করে নেয় বার্মা, তখন বস্তুত: রোহিঙ্গারা তাদের স্বায়ত্বশাসন ফেরত পায়। কিন্তু তা বেশী দিন টিকে থাকতে পারেনি। কারণ ১৯৪৮ খ্রি. ব্রিটেন বার্মা ছেড়ে চলে যায়। এর পরই শুরু হয় রোহিঙ্গা নির্যাতনের করুণ অধ্যায়।
      ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের প্রথম নীল নক্শা আরাকান হতে মুসলমানদে বিতাড়ন ও তাদের মধ্যে ভাগাভাগি সৃষ্টির পদক্ষেপ হিসেবে মগ ডেপুটি কমিশনার ক্যাইড (কুধঁফ)  এর নেতৃত্বে ৯৯% মগদের নিয়ে ইমিগ্রেশন অ্যাক্টের অধীন তদন্তের নামে ইঁৎসধ ঞবৎৎরঃড়ৎরধষ ঋড়ৎপব (ইঞঋ) গঠিত হয়। এই ইঞঋ এর সহযোগিতায় মগরা সমগ্র আরাকান রাজ্যের বুদ্ধিজীবি গ্রাম্য প্রধান, ইসলামি চিন্তাবিদসহ হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয় এবং ঐ অঞ্চলের মুসলিম প্রধান গ্রামের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। এ সময় রোহিঙ্গারা আরাকানের বৈধ নাগরিক হয়ের বার্মার সংবিধানে নৃতাত্ত্বিক বা আদি জাতি সত্তা হিসাবে তালিকাভূক্ত হতে ব্যর্থ হয়।
      স্বাধীন বার্মায় রোহিঙ্গাদের নিষিদ্ধ করা হয় সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি-আধা সরকারি চাকুরির যে কোন পদে। ১৯৬২ খ্রি. জেনারেল নে উইন ক্ষমতায় এসেই রেহিঙ্গাদের উপর চালান অত্যাচারের স্ট্রীম রোলার। ১৯৭০খ্রি. এর পর থেকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭৪ খ্রি. কেড়ে নেওয়া হয় ভোটাধিকার। এর পরে ১৯৭৮ সালে শুরু হয় অপারেশন ড্রাগন কিং, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা সে দেশের সেনাবাহিনীর তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ১৬ মাসের মাথায় বাংলাদেশ ও বার্মার মধ্যে এক দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির ফলে তারা আবার স্বদেশে ফিরে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৮২ সালে সেই দেশের সামরিক শাসকেরা এমনিভাবে তাদের নাগরিক অধিকার আইন সংশোধন করে যা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। ১৯৯১ সালে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ফেরানোর উদ্দেশ্যে আবারো তারা রোহিঙ্গাদের উপর চড়াও হয়। যার ফলে ১৯৯২ এর মার্চের মধ্যে অন্তত ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আবারো বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখনও বার্মিজ সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেছিল। পরর্তীতে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন রাখাইন প্রদেশের রাজধানী মংডুর পশ্চিম এলাকায় রাখাইনরা আবারো রোহিঙ্গাদের উপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। এদিন তারা যাত্রিবাহী বাস থেকে ১০ নিরপরাধ মুসলিম রোহিঙ্গাকে নামিয়ে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
    মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে যেভাবে মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ এবং পাশবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাতে পুরো বিশ্ববাসী আজ হতবাক, বিস্মিত। গত ৯ অক্টোবর ৩টি সীমান্ত পোস্টে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয় ৯ সীমান্ত পুলিশ। এই হত্যার সাথে সম্পৃক্ত এবং দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দেয়ার সন্দেহ থেকেই এই অমানবিক, পাশবিক নির্যাতনের শুরু। এসব অমানবিক হামলায় শতাধিক দুর্ভাগা রোহিঙ্গা নিহত ও মারাত্মক আহত এবং বিপদগ্রস্তরা নানাভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে এখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে খোলা হয়েছে শরণার্থী শিবিরসহ আনুষঙ্গিক আরো অনেক ব্যবস্থা। নারী পুরুষ উভয়ই এই বিপন্ন অবস্থার শিকার হলেও অসহায় এবং দুর্বল অংশ হিসেবে নারী এবং শিশুরাই বেশী নির্মম নিপীড়নে নিষ্পেষিত হচ্ছে। গুলি চালিয়ে, ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়ে যেভাবে হত্যা ও পোড়ানোর বিভীষিকা এবং ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়েছে; একইভাবে নারীদের ওপর অমানুষিক অত্যাচারও নির্দ্বিধায় চলছে। নিজ দেশ থেকে পালাতে গিয়ে সন্তান সম্ভবা অনেক নারী পথিমধ্যেই সন্তান জন্ম দিচ্ছে। এমন অমানবিক, লোমহর্ষক, বেদনাদায়ক ঘটনা মানুষের বিবেককে নানাভাবে তাড়িত করছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এবং অনেকটা সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে এমন নিষ্ঠুর অপ-তৎপরতার অবতারণা করা হয়।
     রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমার সরকার যা করছে তা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধতুল্য। এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আরাকানে বিকশিত হতে থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, নির্যাতন, নিপীড়ন, নাগরিকত্ব সুবিধা না দেয়া, গ্যাটো সৃষ্টি করে সেখানে গাদাগাদি করে অমানবিক পরিবেশে বসবাসে বাধ্য করা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগ করা, বিচার বহির্ভূতভাবে গ্রেফতার করা, মালিকানা স্বত্ব, সার্বজনীন শিক্ষা, চিকিৎসা, উপযোগ সেবা ও মৌলিক মানবাধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে নির্মমতার শেষ সীমানাটুকু অতিক্রম করে চলেছে ক্ষমতাসীনরা। তাদের মনে রাখা দরকার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মাঝে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ তথা সুসংগঠিত অপরাধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রোহিঙ্গাদের ক্রমাগত অমানবিক নিপীড়ন করে ওদেরকে ক্রমশ: চরমপন্থার দিকেই ঠেলে পাঠাচ্ছে মিয়ানমার সরকার যা এক সময় গোদের উপর বিষ ফোড়া হয়ে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে যা আধুনিক বিশ্বের শান্তিকামী কোন মানুষের কাম্য হতে পারে না।

লেখক: কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক, সরকারি সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ, পিরোজপুর।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কোরবানীর আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, কোরবানীর সূচনা।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড শিখুন।