কোরবানীর আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, কোরবানীর সূচনা।
আস্সালামু আলাইকুম। আজ আমি আপনার কোরবানীর বিষয়ে টিউন করবো।
কোরবানীর দিনটিকে আরবীতে বলা হয় يو الا ضحية . আরاضحية
শব্দটি একবচন, বহুবচনে اضاحي – আভিধানিক অর্থ-
(1)কানযুদ্দাকায়েকের প্রণেতা বর্ণনা করেন, الا ضحية ما يضحا اي يذبح . অর্থাৎ কোনো কিছু জবাই করা।
(2)। ফিকহুল ইসলামীর প্রণেতার মতে, ঈদুল আযহার দিনে যা জবাই করা হয়।
পরিভাষায়ঃ ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিলহজ্জ মাসের নির্ধারিত দিন সমূহের যে কোন দিনে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে চতুষ্পদ প্রাণী জবাই কারাকে কোরবানী বলে।
কোরবানীর সূচনাঃ ইতিহাস ও জীবনীমূলক কিতাবাদি থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীতে এমন কোন জাতি ছিল না, যারা স্বীয় মাজহাব অনুসারে কোরবানী করত না। কোরবানীর এ ধারা হযরত আদম আ: এর সন্তান হাবিল কাবিলের মধ্যে বিবাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে, হযরত আদম আ: তাদেরকে এখলাছের সঙ্গে কোরবানী করার নির্দেশ প্রদান করে বললেন, তোমাদের যার কোরবানী কবুল হবে তার সঙ্গেই বিবাহ দিব। তখনকার যুগে কোরবানী কবুল হওয়ার আলামত ছিল, যে কোরবানীটি কবুল হতো তাকে আসমান থেকে একটি আগুন এসে জ্বালিয়ে দিত। উক্ত ভ্রাতৃদ্বয় কোরবানীর আদেশ প্রাপ্ত হয়ে দু’টি দুম্বা কোরবানী করল। হাবিলের দুম্বাটি ছিল মোটাতাজা ও সুন্দর। হাবিলের কোরবানী আল্লাহপাক কবুল করলেন। আর কাবিলের দুর্বল দুম্বাটি এরূপই পড়ে রইল। এতে সে ক্রুদ্ধ হয়ে হাবিলকে হত্যা করে ফেলল। ( কোরবানীর ইতিহাস 10 পৃ)
এ ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহপাক সূরা মায়িদার 27 নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘ আর আপনি তাদেরকে পাঠ করে শুনিয়ে দিন আদমের পুত্রদ্বয়ের ঘটনাটি যথার্থরূপে। যখন তারা উভয়ে নৈকট্য লাভের জন্য কোরবানী দিয়েছিল। অতঃপর তাদের একজনের কোরবানী কবুল করা হলো এবং অপরজনের কোরবানী গ্রহণ করা হয়নি। সে বলল, আমি তোমাকে হত্যা করবই। তখন প্রথম জন বলল, আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীনদের আমলই কবুল করে থাকেন’।
কোরবানীর হাকিকতঃ
কোরবানী শব্দটি আসলে হচ্ছে কোরবানুন। কোরবানুন বলা হয় এমন বস্তুকে, যা আল্লাহ্ তা’আলার নৈকট্য লাভের মাধ্যমে বা উছিলা হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক নেক আমল যা আল্লাহ্ পাকের ণেকট্য ও রহমত অর্জন করে। সেটা জন্তু জবাই করার মাধ্যমেই হোক বা দান সদকা দ্বারা হোক। কিন্তু সাধারণের মধ্যে কোরবান শব্দটি জবেহের জন্যই ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কুরআন মাজিদে প্রায়ই এ শব্দ দ্বারা জন্তুর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন বুঝানো হয়েছে। যেমন- (اذ قربا قربانا )সুতরাং শরীয়তের পরিভাষায় কোরবানী হলো- একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির, নির্দিষ্ট জানোয়ার জবেহ করা। অতএব, কেহ যদি শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানী করে যা বিবাহ শাদীতে অগণিত রুছমের পদ্ধতিতে কোরবানী করে, অথবা মনে ধারণা জন্মে যে, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাপ-দাদারা কোরবানীর ঈদে কোরবানী করতে দেখে আসছি, চলো আমরা সবাই কোরবানী দিই, অথবা পাড়া প্রতিবেশীদের বিদ্রুপ থেকে বাঁচার জন্য বা লোক দেখানোর জন্য কোরবানী করে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে তার কোরবানী হবে না। কোরবানীর মধ্যে জবেহের জযবা একমাত্র আল্লাহর জন্য না হওয়া পর্যন্ত কোরবানী কবুল হবে না এবং সে বিন্দু পরিমাণ কোন ছওয়াব পাবেনা।
পরবর্তী পোষ্ট দেখার জন্য সাথেই থাকুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন