দিনের প্রথম উপার্জনকে ভক্তি জানানো



সকাল বেলা রাস্তায় চলাচল করলে অনেক সময় দেখা যায় যে, রিক্সা, সিএনজি চালক বা দোকানদারগণ দিনের প্রথম উপার্জন হাতে পাওয়ার পর তাতে চুমো দেয়; গাড়ির স্টিয়ারিং, হাতল বা কোন অংশে ছোঁয়ানোর পরে বুকে ও চোখে লাগায়। অনেককে কপালে ঠেকাতেও দেখা যায়। তেমনি কোন কোন ব্যবসায়ীও দিনের প্রথম উপার্জনকে এভাবে ভক্তি জানিয়ো থাকে।
নিজের কষ্টে অর্জিত উপার্জনের উপর মায়া থাকা স্বাভাবিক। ‘দ্বীনে ফিতরাত’ ইসলামে এ স্বাভাবিক আকর্ষণ দোষণীয় নয়; কিন্তু উপরোক্ত ছোঁয়াছুঁয়ি ও কপালে ঠেকানোর মতো ভক্তিমূলক আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। প্রথম উপার্জনকে ভক্তি জানালে পরবর্তী উপার্জনের পথ সুগম হবে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এসব আচরণের সবচেয়ে নিন্দিত দিকটা হল উপার্জনের মাধ্যমকে অর্থাৎ গাড়ি, পণ্য বা ব্যবসা- প্রতিষ্ঠানকে উপার্জনদাতা মনে করা। এমনকি কারও কারও কথাবর্তা থেকে তো পৌত্তলিকতারও আভাস পাওয়া যায়।
বাস্তব কথা এই যে, এ মাধ্যমগুলো উপলক্ষ মাত্র। তাই সবকিছু ঠিক থাকার পরও সবার উপার্জন এবং সব সব সময়ের উপার্জন সমান হয় না। উপার্জন ও রিযিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে।
তিনি কখন কাকে কীভাবে রিযিক দেবেন এবং কোন উপায়ে দেবেন তা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। মানুষের কাজ হল হালাল উপার্জনের চেষ্টায় আল্লাহর দেওয়া মেধা ও শক্তি ব্যবহার করা এবং আল্লাহর কাছে রিযিক প্রার্থনা করা। এর পর মাওলা দয়া করে বান্দাকে যা কিছু দান করেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা এবং তাঁর শোকর আদায় করা। সর্বোপরি এ অটল বিশ্বাস রাখা যে, উপার্জন আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। আর নিয়ামতের শোকরগোযারী করলে আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে দেন। কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,
لئن شكر تم لازيدنكم
‘তোমরা যদি শোকর কর তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বেশি দান করব। ’
উপার্জন হাতে আসার পর এই হল একজন মুমিনের কর্তব্য। তা না করে উপার্জনের মাধ্যম এবং উপার্জিত অর্থ-কড়িকে ভক্তি জানিয়ে মাথায় ও কপালে ঠেকানো সম্পূর্ণ অর্থহীন আচরণ। এর সাথে যদি কোন ভ্রান্ত বিশ্বাস যুক্ত হয় তাহলে যে একটি গর্হিত কাজে পরিণত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কোরবানীর আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, কোরবানীর সূচনা।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড শিখুন।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী