ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও আমাদের করণীয়
ইসলাম সে তো পরশমানিক, তারে কে পেছেছে খুঁজি,
পরশে তাহার সোনা হলো যারা, তাদেরই মোরা বুঝ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উল্লেখিত বিষয়ে আলোকপাত করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে জঙ্গিবাদের পরিচয় সম্পর্কে। জঙ্গিবাদের ব্যাখ্যা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, জঙ্গি, জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদী শব্দগুলো (Militant, Mililancy) শব্দগুলোর অনুবাদ। উর্দূ ও ফারসী ভাষায় জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ, লড়াই ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি এ শব্দগুলো আমাদের মাঝে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
শাব্দিক অর্থে যোদ্ধা, সৈনিক বা যুদ্ধে ব্যবহৃত বস্তু বুঝাতে এ শব্দগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে জঙ্গিবাদ বুঝানো হয় রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে আধুনিক অস্ত্রসহ বে-আইনীভাবে নিরপরাধ অসহায় অযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইত্যাদি অপরাধে জড়িত সম্প্রদায়কে। আর এদের মতবাদকেই বলা হয় জঙ্গিবাদ। যার পরিভাষা হলো সন্ত্রাস।
ইসলামে জঙ্গিবাদ এ বিষয়ে কথা বলতে হলে সর্বপ্রথমেই বলতে হবে ইসলাম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনা। কারণ ইসলামের মূল বক্তব্য হলো বিশ্ব মানবতার কল্যাণ সাধন ও মানব সমাজের সকল শ্রেণীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের কোন সুযোগ যে নেই, তা ইসলাম শব্দের মূলধাতু سلم অর্থ শান্তি থেকে বোঝা যায়। বিশ্ব মানবতার দেহ ও আত্মার পরিপূর্ণ তৃপ্তিও শান্তির গ্যারান্টিই ইসলামের মূল লক্ষ্য। আর জঙ্গিবাদের মূল শ্লোগান হলো সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি, হত্যা, খুন, যুদ্ধ-সংঘাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি সকল প্রকার অপকর্ম যা ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। মানুষের সামগ্রিক জীবনের পরিপূর্ণ কল্যাণ ও নিরাপত্তা বিধানে ইসলাম এক অনন্য আদর্শ ও মডেল। যার প্রকৃত চিত্র যদি জানতে যাই, তাহলে দেখতে হবে রাসূল সা: এর ৬৩ বছর জীবন ইতিহাসে। মক্কী জীবনের ১৩টি বছর ক্ষমা প্রদর্শন ও মজলুম অবস্থায়, মাদানী যিন্দেগীতে ইয়াহুদী ও মুশরিকদের সাথে চুক্তি যেটি মদীনা সনদ নামে পরিচিত, তা ছিল শান্তির লক্ষে। বদর থেকে নিয়ে গাযওয়ায়ে তাবুক পর্যন্ত সকল জিহাদ ছিল আত্মরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়। রাসূল করিম সাঃ এর যুদ্ধের পূর্বে উপদেশ দিতেন- আল্লাহর যমীনে আল্লাহর পথে অভিযান পরিচালনা কর। আল্লাহর প্রতি যারা কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; কিন্তু যুদ্ধে কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও ওয়াদা খেলাফ করো না। গনীমতের মাল আত্মসাৎ করো না। লাশ বিকৃত করো না এবং শিশুকে হত্যা করো না। ( মিশকাত)
মুহতারাম পাঠকবৃন্দ!
প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা: যখন সিরিয়ায় সৈন্য পাঠান তখন তিনি তাদেরকে এই মর্মে নির্দেশ দেন-
১। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে কেউ যেন হত্যা না করে।
২। লাশ যেন বিকৃত করা না হয়।
৩। সন্যাসী ও তপস্বীদের যেন কষ্ট না দেয়া হয় এবং উপাসনালয় যেন ভাঙ্গা না হয়।
৪। ফলবান বৃক্ষ যেন কেউ না কাটে এবং ফসলের ক্ষেত যেন পোড়ানো না হয়।
৫। জনবসতিগুলো সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে যেন জনশূন্য না করা হয়।
৬। পশুদের যেন হত্যা করা না হয়।
যারা আনুগত্য স্বীকার করবে তাদের জানমালকে মুসলমানদের জান মালের মত নিরাপত্তা দিতে হবে।
এ নির্দেশাবলী অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে, ইসলাম যুদ্ধকে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছিল যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুষ্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। আল্লাহপাক বলেন-
وما ا رسلنا ا لا رحملة للعلمين অর্থাৎ হে নবী ! আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। ( সূরা আম্বিয়া-১০৪)
সুতরাং রাসূল সা: এর জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণকর ও রহমত। যেমন দেখুন হুদায়বিয়ার সন্ধির দিকে, মুসলমানদের জন্য হুদায়বিয়ার শর্তাবলী অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য হওয়া সতেত্বও রাসূল সা: চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন।
অনুরূপ আমরা মক্কা বিজয়ের ঘটনাকে বিশ্লেষণ করতে পারি। মক্কা অভিযানে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অবশেষে যুদ্ধের কোন প্রয়োজন হয়নি। বিনা যুদ্ধে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় হয়েছে। অথচ ইচ্ছা করলে সমস্ত কাফের মুশরিকদের হত্যা করে তাদের ধন-সস্পদ নিতে পারতেন। এটা কোনরূপ কল্প-কাহিনী নয়। এটি মনুষ্যত্ত্বের মূর্ত প্রতীক, শান্তি ও কল্যাণের মহানায়কের মহানুভবতা। ইতিহাসের নিরব সাক্ষী, মক্কা বিজয়ের এ ঘটনার সাথে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসামূলক কোন ঘটনাই ঘটেনি; বরং চরম শত্রুদের প্রতি নিঃশর্ত ক্ষমা ঘোষনা করা হয়েছে। এমনকি উহুদের যুদ্ধে যে হিন্দা হযরত রাসূলের প্রিয় চাচা হামযা রা: কে শহীদ হবার পর তাঁর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল তাকেও আল্লাহর রাসূল সা: ক্ষমা করতে দ্বিধা করেননি। হামযা রা: এর হত্যাকারী ওয়াহশী রা: কেও তিনি ক্ষমা করেছিলেন।
ইতিহাসের এমন বিরল ঘটনা জেনেও যারা আল্লাহর রাসূল সা: কে যুদ্ধবাজ আখ্যায়িত করে তারা নিঃসন্দেহে জ্ঞানপাপী। ইসলামের নীতি আদর্শকে যথাযথ মূল্যায়ন না করে যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অপবাদ আরোপ করতে চায়, তারা যে বদবখত ও বিভ্রান্ত এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ যে মুসলমানদের তেজদিপ্ত মূর্তি, উদার হৃদয়, প্রশস্ত বক্ষ, বীর্যশালী বাহু, তেজস্বী প্রকৃতি, বিশ্ব উদ্ভাসী প্রতিভা, কুশাগ্র সূক্ম বুদ্ধি, জলন্ত বিস্ময় ও ভীতি , ভক্তি ও প্রীতির সঞ্ছার করেছিল, তারা আজ রাসূলে আকরাম সা: এর দেখানো রাস্তায় ও সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের উজ্জল নমুনা থাকা সত্ত্বেও ইসলামের দুশমনদের ক্রীড়ানক হয়ে কাজ করছে। একথা ভাবতেও অবাক লাগে।
তাদের নিয়ত কি তা রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন; কিন্তু তাদের সিসটেম যে ভুল, এতে কোন সন্দেহ নেই।
তাই আমাদের খুবই চিন্তা-ভাবনা ও বিচক্ষণাতার সাথে ইসলামের কাজ করতে হবে।
সদর সাহেব হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ: বলেছেন, ‘জিহাদের অর্থ যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ, জুলুম-অত্যাচার নয়, জিহাদের অর্থ যার যা আছে তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে খরচ করা। ’
এই সংজ্ঞার দ্বারা দেখা যায়, কাম, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি রিপুগুলোকে দমন কনতে শক্তি খরচ করাও জিহাদ, কিতাব লেখা, বক্তৃতা দেয়া, দুর্নীতি দমন করা ও দেশে সুনীতি আনার চেষ্টা করা, দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করাও জিহাদ।
সুপ্রিয় পাঠক!
সুতরাং নিরপরাধ অস্ত্রবিহীন লোকদের মাঝে ঢুকে সিরিজ বোমা, গ্রেনেড হামলা করলে জিহাদ হবে না। আজকাল ইসলামী বিদ্যার চর্চা কম হওয়ার কারণে সাধারণত জিহাদ বলতে যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ, জুলম, মানুষ হত্যা, বোমা মারা ইত্যাদি বুঝে থাকে।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে জিহাদ তা নয়। সব কিতাবেই জিহাদের সংজ্ঞা একই ঘোষনা। যেমন-
بذل ا لوسع ؤ لاعلا ء كلمة ا لله
অর্থাৎ আল্লাহর ধর্মকে আল্লাহর আইন-কানূনকে জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য যার যা আছে তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। সুতরাং জিহাদের অর্থ খুব ভালো ভাবে বুঝে শহীদ হওয়া চাই।
জঙ্গিবাদ ও জিহাদ কখনো এক নয়। জিহাদ ও তথাকথিত জঙ্গিবাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যথা-
১। রাষ্ট্র প্রধান বা রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া জিহাদ হয় না। জিহাদ রাষ্ট্র প্রধানের নেতৃত্বে হতে হয়। যেমন- রাসূল সা: ইরশাদ করেন,الا ما م جنة مجنلة অর্থ, রাষ্ট্র প্রধান হলো যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম সেনাবাহিনীর ঢাল স্বরূপ, আর শর্ত সমূহ তথাকথিত জেএমবি, তানজীমুল ইসলাম কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে ছিল সম্পূর্ণ বিপরিত। সুতরাং এটা বৈধ জিহাদ হতে পারে না। বরং হত্যা বলা যায়। তারা ইসলামের মুখোশ পরে ইসলামকে কুলুষিত করতে এই হত্যা যজ্ঞ চালাই।
২। জিহাদ পরিচালিত হতে হবে কাফেরদের বিরুদ্ধে, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। কোন মুসলিম বা নিরপরাধ যে কোন জাতি-গোষ্ঠীর হোক না কেন তাকে জিহাদ বা তাকে হত্যা করা যাবে না। আর জেএমবি তাদের অভিযানে পরিচালিত করেছিল নিরপরাধ মুসলিম ও বনী আদমের বিরুদ্ধে। যার অনুমতি ইসলাম কখনো প্রদান করে না।
৩। যে কোন মানুষ চাই মুসলিম হোক বা অন্য কোন ধর্মের হোক তাকে হত্যা করার জন্য যুদ্ধের ময়দান জরুরী। যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কোন মানুষকে হত্যা করা যাবেনা। ইহা সম্পূর্ন অবৈধ্য। আর বাংলাদেশের জমীন কখনো যুদ্ধের ময়দান হতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ ইসলামের সকল প্রকার বিধি-বিধান পালনের সম্পূর্ণ নিরাপ ভূমি। আর জেএমবি এ ভূমিতে ৩৩ জন নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষকে অন্যায়ভাবে বোমা মেমে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে। সুতরাং এটা জিহাদ হওয়ার পশ্নই আসে না।
৪। জিহাদের বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে শত্রুদের পক্ষ হতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে। যেমন- ‘ তাদেরকে জিহাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে শত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে বিদায়। - সুরা হজ্জ
আর বাংলাদেশেল জমিন কোন শত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হয়নি। সুতরাং এটা জিহাদের ময়দান হতে পারে না। পক্ষান্তরে জেএমবিরা এটা জিহাদের ময়দান হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। সুতরাং বুঝা গেল তারা জিহাদ করেনি বরং জিহাদের নামে তারা যা করেছে তা হলো সন্ত্রাসে অন্তর্ভুক্ত।
৫। জিহাদ হয় প্রকাশ্যে, গোপনে নয়। সুতরাং তারা যে অভিযানগুলো করছে তা গোপনে। সুতরাং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেগুলো জিহাদের অন্তুর্ভূক্ত হবে না।
সচেতন পাঠক মহোদয়ঃ
এবার আসুন আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করি। টুইন টাওয়ার কারা ধ্বংস করেছে, পেন্টাগনে কারা বিমান বিধ্বস্ত করেছে, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি; কিন্তু বিশ্ব মুসলিমের অজানা এক ব্যক্তিকে এবং অচেনা ইসলামী নামের একটি গ্রুপকে সন্দেহ করে গোটা মুসলিম উম্মাহকেই সে জন্য আসামী বানানো হচ্চে, যাকে বলা হয় উদূর পিন্ডি বুদুর ঘাড়ে। শান্তির ধর্ম ইসলামকে বলা হচ্চে সন্ত্রাসী ধর্ম। পবিত্র কুরআনকে ধরে নেয়া হচ্ছে সন্ত্রাসের উৎস। ইসলামী সংস্থা, সংগঠন এমনকি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা-মক্তবগুলোও আজ সীমাহীন বৈরিতার শিকার হচ্চে। ১৭ ই আগস্ট ২০০৫ ইং সনে একই সময়ে বাংলাদেশরও ৬৩ টি জেলায় বোমা ফাটানো, বাঘমারায় বাংলা ভাই কর্তৃক অপরাধের দায়ে মানুষকে ঝুলিয়ে হত্যা করা, জেএমবি কর্তৃক বিচারপতিকে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা ইত্যাদি দেখে শুনে মনে হয় সবই একটা সাজানো নাটক। তবে এ নাটকের মাধ্যমে মুসলমান, ইসলাম ও আল কুরআনকে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের উৎস বানানোর চেষ্টা, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ স: কে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া, তা কিন্তু কষ্মিনকালেও নাটক হতে পারে না। আফগানিস্তান, ইরাক, আরাকান, কাশ্মীর, প্যালেস্টাইনে লাখো শহীদের জীবন দান ও সনীমাহীন সম্পদ ধংস এরই সাক্ষ বহন করে।
আমাদের খুব ভালভাবে মনে রাখতে হবে সমাজতন্ত্রের পতনের পর একমাত্র ইসলামই পশ্চিমা ব্যবস্থার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে থেকে যায়। সব বিবেচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পথ থেকে সরানোই তথা বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের উ্থাননকে বাধাগ্রস্ত করার কুমতলবেই ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। এ জঙ্গিবাদ সৃষ্টির নেপথ্যে ইয়াহুদী, নাসারা, খ্রীষ্ঠান ও ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির ইন্ধন রয়েছে- একথা আজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। এ জঙ্গিবাদের পেছনে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, বিশ্ববাসীর সামনে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বলি বানানো।
মোটকথা, ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে একথা অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে বুঝে আসে যে, ইসলামের যুদ্ধনীতি ও ইসলামী আইনের প্রতিষ্ঠা মানব জাতির বৃহত্তর স্বার্থে, শান্তি ও কল্যাণের জন্যে, ফেৎনা-ফাসাদের মূলোৎপাটনের জন্যে। বোমাবাজী, আদালত প্রাঙ্গনে রক্তপাত, রেলস্টেশনে বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা তথা ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টির জন্য নয়। যে দেশে মসজিদে প্রতিদিন মাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযান হচ্ছে, সুন্দরভাবে লোকজন জামাতের সাথে নামায আদায় করছে, সেখানে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের সুযোগ কোথায়? কুরআন পাকে জিহাদের নির্দেশর্ ফেৎনা-ফাসাদ এর পরিসমাপ্তি ঘটাবার জন্য, ফেৎনা-ফাসাদকে উস্কে দেয়ার জন্য নয়। মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম ওলামাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া নয়।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
তাই আসুন আমরা আমাদের করণীয়গুলো জেনে নেই।
১। এই মুহূর্তে ইসলামের সঠিক পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরি।
২। ইসলামের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দাওয়াত, তা’লীম তাযকিয়া, লিখনী ও মিডিয়ার মাধ্যমে দূর করি।
৩। কুটনৈতিক পন্থায় ইসলাম ও মুসলমান সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিরসন করার চেষ্টা করি।
৪। দেশ, জাতি ও ইসলামের স্বার্থে যেখানেই জঙ্গিদের সন্ধান পাই, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য সরবরাহ করি।
৫। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গড়ে তুলি।
৬। ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কারণ চিহিৃত করে সেগুলো আন্তরিকতার সাথে সমাধান করার চেষ্টা করি।
৭। এ ধরনের সেমিনার ও সেম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জাতির সামনে ‘ জেএমবি, তানজীমুল ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামের নামে ক্ষতিকারক দল’ গুলোর ইসলামের স্বরূপ উদঘাটন করি।
৮। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সামমাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
৯। জুমআর খুৎবায়, দোয়া মাহফিল, জনসভার মাধ্যমে দেশবাসীকে জাগিয়ে তুলি।
১০। সর্বত্র কুরআন-সুন্নাহর সঠিক আলো ছড়িয়ে দেই।
১১। অনলাইনে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরি।
১২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনা বৃদ্ধি করি।
যে কোন অবস্থায় হোক না কেন , জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর হতে হবে। এই স্বাধীন দেশকে নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে তাদেরকে আমরা প্রতিহত করবো। ইংশা আল্লাহ।
পরিশেসে আমাদের সকলকে সঠিক সমজ দান করুন- আমিন।
লেখকঃ www.islamictechbd.blogspot.com
মুহতারাম পাঠকবৃন্দ!
প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা: যখন সিরিয়ায় সৈন্য পাঠান তখন তিনি তাদেরকে এই মর্মে নির্দেশ দেন-
১। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে কেউ যেন হত্যা না করে।
২। লাশ যেন বিকৃত করা না হয়।
৩। সন্যাসী ও তপস্বীদের যেন কষ্ট না দেয়া হয় এবং উপাসনালয় যেন ভাঙ্গা না হয়।
৪। ফলবান বৃক্ষ যেন কেউ না কাটে এবং ফসলের ক্ষেত যেন পোড়ানো না হয়।
৫। জনবসতিগুলো সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে যেন জনশূন্য না করা হয়।
৬। পশুদের যেন হত্যা করা না হয়।
যারা আনুগত্য স্বীকার করবে তাদের জানমালকে মুসলমানদের জান মালের মত নিরাপত্তা দিতে হবে।
এ নির্দেশাবলী অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে, ইসলাম যুদ্ধকে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছিল যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুষ্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। আল্লাহপাক বলেন-
وما ا رسلنا ا لا رحملة للعلمين অর্থাৎ হে নবী ! আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। ( সূরা আম্বিয়া-১০৪)
সুতরাং রাসূল সা: এর জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণকর ও রহমত। যেমন দেখুন হুদায়বিয়ার সন্ধির দিকে, মুসলমানদের জন্য হুদায়বিয়ার শর্তাবলী অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য হওয়া সতেত্বও রাসূল সা: চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন।
অনুরূপ আমরা মক্কা বিজয়ের ঘটনাকে বিশ্লেষণ করতে পারি। মক্কা অভিযানে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অবশেষে যুদ্ধের কোন প্রয়োজন হয়নি। বিনা যুদ্ধে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় হয়েছে। অথচ ইচ্ছা করলে সমস্ত কাফের মুশরিকদের হত্যা করে তাদের ধন-সস্পদ নিতে পারতেন। এটা কোনরূপ কল্প-কাহিনী নয়। এটি মনুষ্যত্ত্বের মূর্ত প্রতীক, শান্তি ও কল্যাণের মহানায়কের মহানুভবতা। ইতিহাসের নিরব সাক্ষী, মক্কা বিজয়ের এ ঘটনার সাথে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসামূলক কোন ঘটনাই ঘটেনি; বরং চরম শত্রুদের প্রতি নিঃশর্ত ক্ষমা ঘোষনা করা হয়েছে। এমনকি উহুদের যুদ্ধে যে হিন্দা হযরত রাসূলের প্রিয় চাচা হামযা রা: কে শহীদ হবার পর তাঁর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল তাকেও আল্লাহর রাসূল সা: ক্ষমা করতে দ্বিধা করেননি। হামযা রা: এর হত্যাকারী ওয়াহশী রা: কেও তিনি ক্ষমা করেছিলেন।
ইতিহাসের এমন বিরল ঘটনা জেনেও যারা আল্লাহর রাসূল সা: কে যুদ্ধবাজ আখ্যায়িত করে তারা নিঃসন্দেহে জ্ঞানপাপী। ইসলামের নীতি আদর্শকে যথাযথ মূল্যায়ন না করে যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অপবাদ আরোপ করতে চায়, তারা যে বদবখত ও বিভ্রান্ত এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ যে মুসলমানদের তেজদিপ্ত মূর্তি, উদার হৃদয়, প্রশস্ত বক্ষ, বীর্যশালী বাহু, তেজস্বী প্রকৃতি, বিশ্ব উদ্ভাসী প্রতিভা, কুশাগ্র সূক্ম বুদ্ধি, জলন্ত বিস্ময় ও ভীতি , ভক্তি ও প্রীতির সঞ্ছার করেছিল, তারা আজ রাসূলে আকরাম সা: এর দেখানো রাস্তায় ও সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের উজ্জল নমুনা থাকা সত্ত্বেও ইসলামের দুশমনদের ক্রীড়ানক হয়ে কাজ করছে। একথা ভাবতেও অবাক লাগে।
তাদের নিয়ত কি তা রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন; কিন্তু তাদের সিসটেম যে ভুল, এতে কোন সন্দেহ নেই।
তাই আমাদের খুবই চিন্তা-ভাবনা ও বিচক্ষণাতার সাথে ইসলামের কাজ করতে হবে।
সদর সাহেব হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ: বলেছেন, ‘জিহাদের অর্থ যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ, জুলুম-অত্যাচার নয়, জিহাদের অর্থ যার যা আছে তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে খরচ করা। ’
এই সংজ্ঞার দ্বারা দেখা যায়, কাম, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি রিপুগুলোকে দমন কনতে শক্তি খরচ করাও জিহাদ, কিতাব লেখা, বক্তৃতা দেয়া, দুর্নীতি দমন করা ও দেশে সুনীতি আনার চেষ্টা করা, দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করাও জিহাদ।
সুপ্রিয় পাঠক!
সুতরাং নিরপরাধ অস্ত্রবিহীন লোকদের মাঝে ঢুকে সিরিজ বোমা, গ্রেনেড হামলা করলে জিহাদ হবে না। আজকাল ইসলামী বিদ্যার চর্চা কম হওয়ার কারণে সাধারণত জিহাদ বলতে যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ, জুলম, মানুষ হত্যা, বোমা মারা ইত্যাদি বুঝে থাকে।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে জিহাদ তা নয়। সব কিতাবেই জিহাদের সংজ্ঞা একই ঘোষনা। যেমন-
بذل ا لوسع ؤ لاعلا ء كلمة ا لله
অর্থাৎ আল্লাহর ধর্মকে আল্লাহর আইন-কানূনকে জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য যার যা আছে তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। সুতরাং জিহাদের অর্থ খুব ভালো ভাবে বুঝে শহীদ হওয়া চাই।
জঙ্গিবাদ ও জিহাদ কখনো এক নয়। জিহাদ ও তথাকথিত জঙ্গিবাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যথা-
১। রাষ্ট্র প্রধান বা রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া জিহাদ হয় না। জিহাদ রাষ্ট্র প্রধানের নেতৃত্বে হতে হয়। যেমন- রাসূল সা: ইরশাদ করেন,الا ما م جنة مجنلة অর্থ, রাষ্ট্র প্রধান হলো যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম সেনাবাহিনীর ঢাল স্বরূপ, আর শর্ত সমূহ তথাকথিত জেএমবি, তানজীমুল ইসলাম কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে ছিল সম্পূর্ণ বিপরিত। সুতরাং এটা বৈধ জিহাদ হতে পারে না। বরং হত্যা বলা যায়। তারা ইসলামের মুখোশ পরে ইসলামকে কুলুষিত করতে এই হত্যা যজ্ঞ চালাই।
২। জিহাদ পরিচালিত হতে হবে কাফেরদের বিরুদ্ধে, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। কোন মুসলিম বা নিরপরাধ যে কোন জাতি-গোষ্ঠীর হোক না কেন তাকে জিহাদ বা তাকে হত্যা করা যাবে না। আর জেএমবি তাদের অভিযানে পরিচালিত করেছিল নিরপরাধ মুসলিম ও বনী আদমের বিরুদ্ধে। যার অনুমতি ইসলাম কখনো প্রদান করে না।
৩। যে কোন মানুষ চাই মুসলিম হোক বা অন্য কোন ধর্মের হোক তাকে হত্যা করার জন্য যুদ্ধের ময়দান জরুরী। যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কোন মানুষকে হত্যা করা যাবেনা। ইহা সম্পূর্ন অবৈধ্য। আর বাংলাদেশের জমীন কখনো যুদ্ধের ময়দান হতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ ইসলামের সকল প্রকার বিধি-বিধান পালনের সম্পূর্ণ নিরাপ ভূমি। আর জেএমবি এ ভূমিতে ৩৩ জন নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষকে অন্যায়ভাবে বোমা মেমে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে। সুতরাং এটা জিহাদ হওয়ার পশ্নই আসে না।
৪। জিহাদের বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে শত্রুদের পক্ষ হতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে। যেমন- ‘ তাদেরকে জিহাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে শত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে বিদায়। - সুরা হজ্জ
আর বাংলাদেশেল জমিন কোন শত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হয়নি। সুতরাং এটা জিহাদের ময়দান হতে পারে না। পক্ষান্তরে জেএমবিরা এটা জিহাদের ময়দান হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। সুতরাং বুঝা গেল তারা জিহাদ করেনি বরং জিহাদের নামে তারা যা করেছে তা হলো সন্ত্রাসে অন্তর্ভুক্ত।
৫। জিহাদ হয় প্রকাশ্যে, গোপনে নয়। সুতরাং তারা যে অভিযানগুলো করছে তা গোপনে। সুতরাং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেগুলো জিহাদের অন্তুর্ভূক্ত হবে না।
সচেতন পাঠক মহোদয়ঃ
এবার আসুন আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করি। টুইন টাওয়ার কারা ধ্বংস করেছে, পেন্টাগনে কারা বিমান বিধ্বস্ত করেছে, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি; কিন্তু বিশ্ব মুসলিমের অজানা এক ব্যক্তিকে এবং অচেনা ইসলামী নামের একটি গ্রুপকে সন্দেহ করে গোটা মুসলিম উম্মাহকেই সে জন্য আসামী বানানো হচ্চে, যাকে বলা হয় উদূর পিন্ডি বুদুর ঘাড়ে। শান্তির ধর্ম ইসলামকে বলা হচ্চে সন্ত্রাসী ধর্ম। পবিত্র কুরআনকে ধরে নেয়া হচ্ছে সন্ত্রাসের উৎস। ইসলামী সংস্থা, সংগঠন এমনকি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা-মক্তবগুলোও আজ সীমাহীন বৈরিতার শিকার হচ্চে। ১৭ ই আগস্ট ২০০৫ ইং সনে একই সময়ে বাংলাদেশরও ৬৩ টি জেলায় বোমা ফাটানো, বাঘমারায় বাংলা ভাই কর্তৃক অপরাধের দায়ে মানুষকে ঝুলিয়ে হত্যা করা, জেএমবি কর্তৃক বিচারপতিকে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা ইত্যাদি দেখে শুনে মনে হয় সবই একটা সাজানো নাটক। তবে এ নাটকের মাধ্যমে মুসলমান, ইসলাম ও আল কুরআনকে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের উৎস বানানোর চেষ্টা, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ স: কে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া, তা কিন্তু কষ্মিনকালেও নাটক হতে পারে না। আফগানিস্তান, ইরাক, আরাকান, কাশ্মীর, প্যালেস্টাইনে লাখো শহীদের জীবন দান ও সনীমাহীন সম্পদ ধংস এরই সাক্ষ বহন করে।
আমাদের খুব ভালভাবে মনে রাখতে হবে সমাজতন্ত্রের পতনের পর একমাত্র ইসলামই পশ্চিমা ব্যবস্থার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে থেকে যায়। সব বিবেচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পথ থেকে সরানোই তথা বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের উ্থাননকে বাধাগ্রস্ত করার কুমতলবেই ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। এ জঙ্গিবাদ সৃষ্টির নেপথ্যে ইয়াহুদী, নাসারা, খ্রীষ্ঠান ও ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির ইন্ধন রয়েছে- একথা আজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। এ জঙ্গিবাদের পেছনে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, বিশ্ববাসীর সামনে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বলি বানানো।
মোটকথা, ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে একথা অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে বুঝে আসে যে, ইসলামের যুদ্ধনীতি ও ইসলামী আইনের প্রতিষ্ঠা মানব জাতির বৃহত্তর স্বার্থে, শান্তি ও কল্যাণের জন্যে, ফেৎনা-ফাসাদের মূলোৎপাটনের জন্যে। বোমাবাজী, আদালত প্রাঙ্গনে রক্তপাত, রেলস্টেশনে বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা তথা ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টির জন্য নয়। যে দেশে মসজিদে প্রতিদিন মাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযান হচ্ছে, সুন্দরভাবে লোকজন জামাতের সাথে নামায আদায় করছে, সেখানে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের সুযোগ কোথায়? কুরআন পাকে জিহাদের নির্দেশর্ ফেৎনা-ফাসাদ এর পরিসমাপ্তি ঘটাবার জন্য, ফেৎনা-ফাসাদকে উস্কে দেয়ার জন্য নয়। মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম ওলামাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া নয়।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
তাই আসুন আমরা আমাদের করণীয়গুলো জেনে নেই।
১। এই মুহূর্তে ইসলামের সঠিক পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরি।
২। ইসলামের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দাওয়াত, তা’লীম তাযকিয়া, লিখনী ও মিডিয়ার মাধ্যমে দূর করি।
৩। কুটনৈতিক পন্থায় ইসলাম ও মুসলমান সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিরসন করার চেষ্টা করি।
৪। দেশ, জাতি ও ইসলামের স্বার্থে যেখানেই জঙ্গিদের সন্ধান পাই, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য সরবরাহ করি।
৫। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গড়ে তুলি।
৬। ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কারণ চিহিৃত করে সেগুলো আন্তরিকতার সাথে সমাধান করার চেষ্টা করি।
৭। এ ধরনের সেমিনার ও সেম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জাতির সামনে ‘ জেএমবি, তানজীমুল ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামের নামে ক্ষতিকারক দল’ গুলোর ইসলামের স্বরূপ উদঘাটন করি।
৮। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সামমাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
৯। জুমআর খুৎবায়, দোয়া মাহফিল, জনসভার মাধ্যমে দেশবাসীকে জাগিয়ে তুলি।
১০। সর্বত্র কুরআন-সুন্নাহর সঠিক আলো ছড়িয়ে দেই।
১১। অনলাইনে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরি।
১২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনা বৃদ্ধি করি।
যে কোন অবস্থায় হোক না কেন , জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর হতে হবে। এই স্বাধীন দেশকে নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে তাদেরকে আমরা প্রতিহত করবো। ইংশা আল্লাহ।
পরিশেসে আমাদের সকলকে সঠিক সমজ দান করুন- আমিন।
লেখকঃ www.islamictechbd.blogspot.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন