কোরবানীর ইতিহাস


প্রিয় পাঠক আর কিছুদিন পরেই আমাদের মাঝে আনন্দের একটি দিন আসতেছে আর তা হলো কোরবানীর ঈদ অর্থাৎ ঈদুল আযহা। কোরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে আজ লিখব, আশা করি পড়ে উপকৃত হবেন। যাক কথা না বাড়িয়ে শুরু করছি।
কোরবানীর ইতিহাসঃ হযরত ইবরাহীম আ: থেকে তামাম দুনিয়ায় সমগ্র মুসলমান প্রতি বছরে যিলহজ্জ মাসের ১০,১১,১২ তারিখে যে কোরবানী করে আসছে, তা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতিচারণ যা বিশ্বের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।আল্লাহ পাকের দরবারে সান্নিধ্য প্রাপ্ত মহা পুরুষদেরকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, তাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রাণকে সোপর্দ করে তাঁর আদেশের প্রতি সন্তুষ্টির পরিচয় দিতে হয়। ইবরাহীম আ: আরো দুটি পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন।
প্রথমটি হল, হযরত ইবরাহীম আ: কে আগুনে নিক্ষেপ করা। আর দ্বিতীয়টি হল, যখন বিবি হাজেরা আ: কে মক্কার অনাবাদ মরু ভূমির প্রান্তরে ছেড়ে আসার আদেশ তাও সাধারণ পরীক্ষা ছিল না। এর সঙ্গে কলিজার টুকরা, নয়নের মনি হযরত ইসমাইল আ: কে রেখে আসা। যাকে বৃদ্ধ বয়সে অনেক রোনাজারির পর আল্লাহপাক দিয়েছেন। তিনি এই দুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুরু হল হৃদয় বিদারক পরীক্ষা। স্নেহের পুত্র ইসমাঈল আ: কে কোরবানীর পরীক্ষা। যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ ইবরাহীম আ: স্বপ্ন দেখলেন, ইবরাহীম! তুমি কোরবানী কর। সকালে উঠে তিনি স্বত:ষ্ফূর্ত ভাবে এক শত উট কোরবানী করলেন। কিন্তু পরের দিন নয় তারিখ রাতেও একই নির্দেশ প্রাপ্ত হলেন। পরের দিন সকালে তিনি একশত উট কোরবানী করলেন। এবার তৃতীয় রাত যিলহজ্জ মাসে দশ তারিখে একই স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটে। আগামী দিনই হচ্ছে কোরবানীর দিন। সুতরাং তার নিকট পরিষ্কার হয়ে গেল যে, আজ কী কোরবানী করতে হবে। আদরের সন্তান ইসমাঈল আ: পিতার হাতে আল্লাহর নামে জবাই হবেন।  কিন্তু স্বপ্নের ইশারা ইঙ্গিতে নির্দেশটি কোন বস্তুর প্রতি তা বুঝান হয়নি। হযরত ইবরাহীম আ: স্বপ্নে আরয করেন, আমি কী কোরবানী করব? ইশারায় জানিয়ে দেয়া হল, তোমার নিকট সবচেয়ে যা প্রিয় তাই কোরবানী কর। আর ইবরাহীম আ: এর একমাত্র  সন্তানই ছিলেন তাঁর সর্বাপেক্ষা আদরের। এজন্যই আহলে কিতাবের বর্ণনায় যবেহের জন্য নিয়ে যাওয়া ছেলেটিকে একমাত্র প্রিয় ছেলে বলা হয়েছে। কেননা, তারা তাদের বর্ণনা অনুযায়ীও ইসামঈল আ: ই সর্ব প্রথম জন্মগ্রহণ করেন। যখন হযরত ইবরাহীম আ: এর বয়স ৮৬ বৎসর, তখন হযরত ইসামইল আ: এর জন্ম হয়। আর ৯৯ বছর বয়সে জন্ম হয় হযরত ইসহাক আ: এর।
সুতরাং বৃদ্ধ মায়ের সন্তান কতটুকু আদরের তাহা আপনারা সহজেই অনুমান করতে পারবেন। তাছাড়া হযরত ইসমাঈল আ: তখন যৌবনের দিকে পদার্পণ করেছিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত অনুপম সৌন্দর্য ও চরিত্র মাধুরী তাঁর মধ্যে বিকশিত হচ্ছিল ফুটন্ত গোলামের মত। তাকে আরবগণ بنو ما السما ء বা আকাশের পানির সন্তান খেতাবে ভূষিত করেছিল। তিনি  ছিলেন এমন নবুওয়তের উত্তরসূরী যার উম্মত হবার জন্য সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম অভিলাস রাখতেন। সুতরাং কোরবানীর জন্য নির্দেশিত সন্তান হযরত ইসমাঈল আ: ছিলেন- পিতা হযরত ইবরাহীম আ: এর হৃদয়ের টুকরা, চোখের মনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কোরবানীর আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, কোরবানীর সূচনা।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড শিখুন।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী