সহানুভূতির হকদার বেলুচিস্তান না কাশ্মীরঃ
হাসান আল মাহমুদ::
সম্প্রতি ভারত সফরে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বেলুচিস্তান ইস্যুতে ভারতীয় শীর্ষ পত্রিকা দ্য হিন্দুর সঙ্গে
আলাপচারিতায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, 'ঢাকা দ্রুতই বেলুচিস্তানে
পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নীতির ঘোষণা দেবে।'সেই অালাপচারিতায় তিনি আরো যা বলেছিলেন, 'বেলুচিস্তান পাকিস্তানেরসামরিক বাহিনীর রোষাণলপ্রত্যক্ষ করছে।যেই বাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের টার্গেট করেছিল। জাতীয়তার আকাঙ্ক্ষা মোকাবিলা প্রশ্নে পাকিস্তানের ট্র্যাক রেকর্ড অত্যন্ত বাজে। ১৯৭১ সালের পরাজয় থেকে তারা কিছুই শেখেনি। তারা দমন-পীড়নের একই নীতি চর্চা করে চলেছে। আর এখন টার্গেট করছে বেলোচ জাতীয়তাবাদীদের।স্বাধীনতার সংগ্রামগুলোর প্রতি সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বাঁধা।আর দ্রুতই আমরা বেলুচিস্তান নিয়ে আনুষ্ঠানিক নীতির ঘোষণা দেবো।’
দ্য হিন্দুর রিপোর্টে বলা হয়, বেলুচিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তুলনা করে
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমজে আকবর মন্তব্য করার একদিন পরই মি. ইনুর কাছ থেকে একই ধরনের মন্তব্য আসলো।
এবার আসুন শিরোনামের অালোকে উক্ত দুই দেশ নিয়ে একটু পর্যালোচনা করি।যাতে করে তৃণমূল থেকে উঠে
আসে প্রকৃতপক্ষে সহানুভূতির হকদার কে বেলুচিস্তান না কাশ্মীর? বেলুচিস্তান দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ।
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম এই প্রদেশটির আয়তন ৩,৪৭,১৯০ বর্গকিলোমিটার এবং এটি পাকিস্তানের মোট আয়তনের প্রায় ৪৮% গঠন করেছে। বেলুচি জাতির লোকদের নামে অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে। এর পশ্চিমে
ইরান (ইরানি বেলুচিস্তান), উত্তরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, পূর্বে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশ এবং
দক্ষিণে আরব সাগর ।ইতিহাসের বিভিন্ন ধারা মাড়িয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সাথে
যুক্ত হতে সম্মত হয়। ১৯৫২ সালে বেলুচিস্তান ছিল পাঁচটি জেলা ও চারটি প্রাক্তন রাজ্যের সমষ্টি। জেলাগুলি হল কুয়েতা-পিশিন, সিবি, জোব , লোরালাই , এবং চাগাই । আর প্রাক্তন রাজ্যগুলি হল কালাত , লাস-বেলা , খারান এবং মাকরান। ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে বাকী প্রদেশ ও রাজ্যগুলির সাথে বেলুচিস্তানকে যুক্ত করে পশ্চিম
পাকিস্তান প্রদেশ গঠন করা হয়।সেই থেকে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হয়ে আছে। তাদের প্রতি পাকিস্তান কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে এরকম নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না। ১৯৫৮ সালে কালাত রাজ্যের শাসক পাকিস্তানের সাথে বেলুচিস্তানেরএই সংযোজন প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করলেও তারএই বিদ্রোহ শীঘ্রই দমন করা হয়।সেই থেকে কোনো কোনো সময় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের নামে বেলুচিস্তানে সেনা অভিযান চালানো হলেও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কোনো দায়িত্বশীল দেশি-বিদেশি মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তুলে ধরতে পারেনি।তাছাড়া অনেক সূত্র থেকে প্রতিয়মান হয় বেলুচিস্তানে গুটিকয়েক যেসব লোক বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টির চেষ্টা করে তা মূলত ভারতের প্ররোচনা ও ইন্ধনের কারণেই।অথচ বেলুচিস্তানের জনগণ পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী।তাছাড়া শত শত ভারতীয় গোয়েন্দা ইরান ও ভারত সীমান্ত দিয়ে বেলুচিস্তানে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান করছে ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগ রয়েছে।এমনকি
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনী বহু ভারতীয় গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে।এদের অনেকেই মুসলিম পরিচয় ধারণ করে বেলুচিস্তানে অবস্থান করছিল।সুতরাং ভারতীয় সুরে বেলুচিস্তানকে বাংলাদেশে ৭১ এর মতো অবস্থার
সাথে তুলনা করাটা ভারতের আজন্ম স্বার্থ হাসিলের পথকেই সুগম করে। কারণ ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান
( বাংলাদেশ),পশ্চিম পাকিস্তান,পাঞ্জাব,সিন্ধু,বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে দ্বিজাতি তত্ত্ব তথা ইসলামী
জাতীয়তাবাদের অাদর্শকে অবলম্বন করে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত হবার পর থেকেই ভারতের গা চুলকানির উদ্ভব
ঘটায়।আর তার উপর অারো কেরোসিনঢালা হয় কাশ্মীর ইস্যুটি। কাশ্মীরের মুসলিম প্রধান অংশের নাম কাশ্মীর এবং হিন্দু প্রধান অংশের নাম জম্মু। তবে দুই অংশের মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় মুসলিম প্রধান হলেও এর শাসক ছিলেন
হরি সিং নামে এক হিন্দু যাকে বলা হতো ‘ডোগরা রাজা’। তিনি ১৯২৫ সালে কাশ্মীরের রাজা হন। ১৯৪৭ সালে ভারতের
স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক। ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন,অথবা তাঁরা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসনকাজ চালাতে
পারবেন। হরি সিং ভারত বা পাকিস্তান এর কোনোটিতেই যোগদান না করে রাজা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার
অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। এটি পাকিস্তান মেনে নিলেও ভারত মেনে নিল না। ১৯৪৭ সালের ২৫ অক্টোবর হরিসিং কাশ্মীরের ভারত ভুক্তির চুক্তিতে সই করেন। ২৭ অক্টোবর তা ভারতের গভর্নর- জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়। কথিত আছে যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বান্ধবী লেডিমাউন্ট ব্যাটেনের প্রভাবে ও ভারতের কূটকৌশলে শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। চুক্তি সই হওয়ার পর, ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশকরে। ১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর পাকিস্তান-সমর্থিত আদিবাসীরা কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। ভারতের সৈন্য নামানোর
সংবাদ পেয়ে পাকিস্তানও কাশ্মীরে সৈন্য প্রেরণ করল এবং ভারতীয় সৈন্যদের হটিয়ে দিয়ে কাশ্মীরের অংশবিশেষ দখল করল। ১৯৪৭- ১৯৪৮ সালের দিকে এই দুই দেশের মাঝে কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টিতে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করে। এই মধ্যস্থতা ভারত মেনে না নিলে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ শুরু হয় । ১৯৬৬ সালের ১০ ই জানুয়ারী বর্তমান রাশিয়া
তাসখন্দচুক্তির মাধ্যমে সে যুদ্ধের নিষ্পত্তি ঘটাতে সক্ষম হলেও ১৯৭১ সালে আবার তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।অার এভাবেই পাডা-পুতার ঢলাঢলিতে( বহিরাগত দুই দেশের গোলাগুলিতে) ভূস্বর্গের স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরের মানবতা চরমভাবে
ভূলন্ঠিত। কাশ্মীরের জনগণের অাজন্ম দাবী স্বাধীনতার।কারো অধীনে থাকতে নারাজ তারা।কিন্তু ভারত তাদের
স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখতে গড়ে প্রতি ১০০০ কাশ্মীরীর জন্য ২০জন ভারতীয় সৈন্য লাগিয়ে রেখেছে।
প্রতিটি কাশ্মীরী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি গড়ে ৫ জন ধরা হয় তবে অর্থ দাঁড়ায়, যে গ্রামে ২০০ ঘর মানুষের
বাস সেখানে অবস্থান নিয়েছে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য। কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর বিশাল অবস্থান ১৯৪৭ সাল
থেকেই। তবে সে সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বেড়েছে ১৯৮৯ সালে। কারণ তখন থেকেই কাশ্মীরে ভারতপন্থি শেখ আব্দুল্লাহ পরিবারের প্রভাব ব্যাপক ভাবে লোপ পায় এবং তীব্রতর হয় স্বাধীনতার দাবী। সে দাবী এখন প্রতিদিন তীব্রতর হচ্ছে এবং সে সাথে দিন দিন বাড়ছে সৈন্য সংখ্যা। কাশ্মীর আজ অশান্ত এবং দেশটিতে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে অবিরাম রক্ত ঝরছে মূলত স্বাধীনতার ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই। কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা আন্দোলন কতটা তীব্র আকার ধারণ করেছে সেটা বুঝানোর জন্য প্রখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক অরুণদ্ধুতি রায় লন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ানে কয়েক বছর আগে যে নিবন্ধ লিখেছেন সেটি তথ্যবহুল। তিনি লিখেছেন, গত ১৫ই আগস্ট ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। সেদিন শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থল লালা চক দখলে নিয়েছিল বিশাল জনসমুদ্র। তারা আওয়াজ তুলছিল ‘জিয়ে জিয়ে পাকিস্তান’। অর্থাৎ পাকিস্তান
জিন্দাবাদ। স্লোগান তুলছিল, ‘হাম কেয়া চাহতে হেঁ?’ (আমরা কি চাই?)জনতার মুখে জবাব ছিল ‘আজাদি’ (স্বাধীনতা)। জিজ্ঞাসার সুরে স্লোগান উঠছিল, ‘‘আজাদি কা মতলব কেয়া (অর্থ: স্বাধীনতার লক্ষ্য কি?) জনতা সমস্বরে জবার দিচ্ছিল-
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আওয়াজ উঠছিল, পাকিস্তান ছে রিশতা কিয়া? (অর্থ: পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি?) জনতা জবাব দিচ্ছিল, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’। তারা বলেছে, ‘‘এ্যায় জাবেরো, এ্যায় জালেমো! কাশ্মীর হামারা ছোড় দো’’ অর্থ: ‘‘হে অত্যাচারী, হে মজালেম! আমাদের কাশ্মীর ছেড়ে দাও।’’ অরুন্ধতী রায় আরো লিখেছেন, তারা আরো বলেছে, ‘‘ভুখানাঙ্গা হিন্দুস্তান, জানছে পেয়ারা পাকিস্তান।’’১৫ই আগস্টে সবুজ পতাকা ছেয়ে ফেলেছিল শ্রীনগর শহর। অথচ
ভারতের স্বাধীনতার এ দিনটিতে ভারতের পতাকা শোভা পাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। ঐ দিনকে ‘গোলামীর দিন’ রূপে ধ্বনিত করছিল। জনতার ঢল নেমেছিল শুধু শ্রীনগরে নয়, শহরতলীর গ্রামগুলোতেও। বাস, টেম্পো, ট্রাক, মটর সাইকেল ও রিকশায় চেপে মানুষের ঢল নেমেছিল শ্রীনগরের রাজ পথে। ভারতপন্থি দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল
কনফারেন্স ও পিপলস’ ডিমোক্রাটিক পার্টির নেতাদের দিল্লিস্থ টিভি স্টুডিওতে দেখা গেলেও তাদের কারো সাহস ছিল না শ্রীনগরের রাজপথে নামার। মনে হচ্ছিল, জনগণ যেন নতুন ভাবে নিজেদের আবিষ্কার করেছে। লোপ পেয়েছে ভয়,
জেগে উঠেছে তাদের প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। অরুন্ধতী রায়ের কথায় মনে হয়, ফিলিস্তিনীদের ইন্তেফাদা (গণঅভ্যুত্থান) যেন নেমে এসেছে শ্রীনগরের অলি-গলিতে। ফিলিস্তিনী শিশু ও যুবকেরা যেমন নির্ভয়ে পাথর ছুড়ে ইসরাইলী আর্মির টহলদার গাড়ির উপর, তেমন চিত্রম শ্রীনগরেও। শহর জুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির শোভা পাচ্ছে সবুজ পতাকা। শ্রীনগর শহরের যেন নতুন সাজ। ভারতীয় গণতন্ত্র ওস্বাধীনতার প্রসঙ্গ তুললে মহিলারা তারস্বরে বলে, কিসের স্বাধীনতা? ভারতীয় সৈন্যদের হাতে ধর্ষিতা হওয়ার স্বাধীনতা? তবে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পথে শুরু হলেও ভারতী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য
সেটিকে শান্তিপূর্ণ থাকতে দেয়নি। ইতিমধ্যে বহু নিরীহ নাগরিককে তারা হত্যা করেছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে গুলিবর্ষণের ঘটনা। ভারতীয় সেনারা শ্রীনগর শহরে কারফিউ জারি করছে, কিন্তু কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল হচ্ছে। এবং প্রাণও দিচ্ছে। এ প্রাণদান গণ্য হচ্ছে পবিত্র শাহাদাৎ রূপে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় কাশ্মীরে ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন যেন দিন দিন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। স্বাধীনতার দাবিতে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে বিচ্ছিন্নতাবাদী ট্যাগ লাগিয়ে
গুলি করে খুন করা হচ্ছে। শুধু পুরুষরাই নয়, রেহাই পাচ্ছেনা নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই। এ ঘটনাগুলার বেশিরভাগই ঘটছে জম্মু এবং কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে। যখনই ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী কাউকে হত্যা করছে বিচার না পাওয়ায় তখনই অন্যরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে এবং নিরস্ত্র শিশুরা গুলির জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছুঁড়ছে। ট্যাঙ্ক সহ সামরিক বহর ওয়ালা ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র বাহিনীর দিকে কিছু শিশুর পাথর ছোড়া এতটাই বিপজ্জনক
যে,সে কারণেই এ কে ৪৭ দিয়ে নির্বিচারে ব্রাশ ফায়ার করে সৈন্যরা তার জবাব দিচ্ছে। একইসাথে কাশ্মীরের রাজ্যশাসক ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর এ গুলিবর্ষণকে আত্মরক্ষার কথা বলে ন্যায্যতা দিয়ে
যাচ্ছে!হারামিরও এএকটা শেষ থাকে। নিরস্ত্র কিছু শিশু একটা সুসজ্জিত বাহিনীর জন্য হুমকি- বিশ্বকে এখন এটাও মেনে নিতে হবে। অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণও বেড়ে চলেছে। কাশ্মীরি নারীদের গুম করে নিয়ে ধর্ষণ করে ইন্ডিয়ার সেনারা।
আবার খোলামেলা সবার সামনেই গণধর্ষণ করছে তারা। এটা সেখানে এখন খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইনডিপেন্ডেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উনিশশ একানব্বই সালের বাইশে ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ার
সেনাবাহিনীর একটা দল কুনান পুশপরা গ্রামে এসে প্রথমে নারী ও পুরুষদের আলাদাভাবে আটক করে। এরপর চৌদ্দ
থেকে একশ বছর বয়সের অন্তত তেইশ জন নারীকে তাদের স্বামী, সন্তান বা বাবার সামনে গণধর্ষণ করে। গত ২০১০
সালের পয়লা এপ্রিল জম্মু কাশ্মীরের পুলিশ জানিয়েছে, নভেম্বর দুই হাজার দুই থেকে জুলাই দুই হাজার আট সাল
পর্যন্ত ছয় বছরে ইন্ডিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে ৫১ জন নারী ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। কাশ্মীরের রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশন স্টেট হিউমেন রাইটস কমিশন (এসএইচআরসি) ২০০৮-২০০৯ বছরে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ৪০৪ টা মামলা করেছে। যার মধ্যে ৬ টা ধর্ষণ, ৪৩ টা নিখোঁজ এবং ৯ টা পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা অন্যতম। ২০১০ সালের জুন মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় দখলদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ১০২ জনের মৃত্যু হয়। এদের কেউ তথাকথিত সশস্ত্র জঙ্গি নন এবং মৃতদের মধ্যে শিশু ও কিশোরও আছে। ভারতীয় জঙ্গি বাহিনীর এ নির্দয় নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকিত স্লোগান দিয়েছে। ‘ডেইলি গ্রেটার কাশ্মীর’ ২৯ জুন,২০১০
প্রতিবেদন ছাপে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত কাশ্মীরে নিহতের মধ্যে বারো জন ছিল তেরো থেকে উনিশ বছর বয়সের। তাদের মধ্যে নয় জনকেই আধা সামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। পত্রিকার পাতায় যে প্রতিবেদনগুলো ছাপা হয়েছে সেগুলা আসল ঘটনার খুবই সামান্য চিত্র। কারণ
কাশ্মীরে ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলা অপরাধ করে সে অপরাধ প্রকাশের আলামত ও উপায়ও বন্ধ করে দেয়। একইভাবে মানবাধিকার কর্মী বা সাংবাদিকদের ওপর সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে তারা তাদের সুবিধা মত বহু বিধি নিষেধ আরোপ করে রেখেছে। ফলে সেখানে ইন্ডিয়ান সেনাদের ভয়ে অত্যাচারিত হয়েও অনেক নিরীহ
মানুষ মুখ খুলতে পারে না। যে কারণে গুম,হত্যা সহ অসংখ্য হত্যা, ধর্ষণ এবং অপহরণের খবর অজানাই থেকে যায়।২০১১ সালের আগস্টে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের তিনটি এলাকায় ৩৮টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টেট হিউম্যান রাইটস কমিশন (সিএইচআরসি) গত তিন বছর ধরে চেষ্টা চালানোর পর এসব গণকবর খুঁজে পাওয়া পায়। সিএইচআরসি জানিয়েছে, এসব গণকবরে ২ হাজার ১৫৬টি লাশ পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয় ৯০ এর গণ আন্দোলনের গণহত্যার লাশ এগুলি। শ্রীনগরভিত্তিক সংগঠনটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী উনিশশ উননব্বই সাল থেকে এ পর্যন্ত কাশ্মীরে আট হাজার লোক গুম হয়েছে। ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে ফেরত দেয় নাই। এবং এরপর
তাদের আর কোন খোঁজও পাওয়া যায়নাই। সংগঠনটি তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেখাচ্ছে, উত্তর কাশ্মীরের বান্ডিপুরা, ব্যারামুল্লা ও কুপওয়ারা জেলার পঞ্চান্নটা গ্রামে ২ হাজার ৭০০টা অজ্ঞাত ও অশনাক্ত গণকবর আছে। এগুলো শনাক্ত করে লাশ উদ্ধারে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত পরিষদ গঠনে শ্রীনগর সরকার ও দিল্লি সরকারের কাছে আহবানও
জানিয়েছিল আইপিটিকে। ১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারি গাজা উপত্যকায় সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছিল এক ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে মিছিল করে নিরস্ত্র মুক্তিকামী কাশ্মীরি জনগণ। কিন্তু ইন্ডিয়ার সেনাসহ রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী মিছিলটিতে নির্বিচারে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে প্রায় ১০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। গোয়াকাডাল ব্রিজে সংঘটিত সেই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের বীভৎস স্মৃতি আজও
তাড়িয়ে বেড়ায় কাশ্মীরের জনগণকে। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত চলছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এসব অবিচার এবং খুনের ঘটনার জন্য এ পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয় নাই। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিটা খুনই জনমনে ক্ষোভ তৈরি করেছে। যেখানে একদিকে ইন্ডিয়ান সেনাদের জুলুম, নির্যাতন,
হত্যা, ধর্ষণ আরেক দিকে কাশ্মীর রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর দমন পীড়ন, রাজ্যের বেআইনি হত্যাকান্ড ও
অন্যায় নিপীড়ন সমান তালে চলছে কাশ্মীরে। মোটকথা এসব ঘটনা কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ, প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আরো শক্তিশালী করে তুলছে। কাশ্মীরে এ পর্যন্ত ঠিক কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, কি পরিমাণ বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কত সংখ্যক মানুষকে নিরাপত্তা বাহিনী ধরে নিয়ে
ফেরত দেয় নাই তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। নানা পক্ষ থেকে নানা পরিসংখ্যান দাবি করা হয়েছে। কাশ্মীরের
স্বাধীনতার প্রচারণা সংগঠন কাশ্মীর আমেরিকান কাউন্সিলও (কেএসি) একটা পরিসংখ্যান করেছে। তাতে তারা দাবি করেছে, স্বাধীনতা আন্দোলনের গত বিশ বছরে নারী, শিশু ও যুবক মিলিয়ে এক লাখ নিরীহ কাশ্মীরি ইন্ডিয়ান সেনা এবং
রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে খুন হয়। স্থানীয় এনজিও আইপিটিকের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর উপত্যকায় ইন্ডিয়ান সৈন্যদের হাতে নিহতের সংখ্যা সত্তর হাজারেরও বেশি।এভাবে সুষ্ঠু পরিসংখ্যান চালােত পারলে লাখকেও ছাড়িয়ে যাবে।গত কয়েকদিনে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী তরুণ নেতা বুরহান
ওয়ানিকে হত্যার জের ধরে কাশ্মীরের অাবারো জেগে উঠে। স্বাধীনতার দাবীতে রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের স্বাধীনতাকামী জনতা।তাদের স্বাধীনতাকে দাবিয়ে রাখতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যবহার করে কামান,গুলি।এ ইস্যুতে এ পর্যন্ত ৭০জন কাশ্মীরি শাহাদত বরণ করে।এভাবে ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরকে অার কত রক্ত দিলে, আর কত শিশু,নারী হত্যা হলে হাসানুল হক ইনুদের মত লোকেরা কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা দাবীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে?
আলাপচারিতায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, 'ঢাকা দ্রুতই বেলুচিস্তানে
পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নীতির ঘোষণা দেবে।'সেই অালাপচারিতায় তিনি আরো যা বলেছিলেন, 'বেলুচিস্তান পাকিস্তানেরসামরিক বাহিনীর রোষাণলপ্রত্যক্ষ করছে।যেই বাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের টার্গেট করেছিল। জাতীয়তার আকাঙ্ক্ষা মোকাবিলা প্রশ্নে পাকিস্তানের ট্র্যাক রেকর্ড অত্যন্ত বাজে। ১৯৭১ সালের পরাজয় থেকে তারা কিছুই শেখেনি। তারা দমন-পীড়নের একই নীতি চর্চা করে চলেছে। আর এখন টার্গেট করছে বেলোচ জাতীয়তাবাদীদের।স্বাধীনতার সংগ্রামগুলোর প্রতি সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বাঁধা।আর দ্রুতই আমরা বেলুচিস্তান নিয়ে আনুষ্ঠানিক নীতির ঘোষণা দেবো।’
দ্য হিন্দুর রিপোর্টে বলা হয়, বেলুচিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তুলনা করে
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমজে আকবর মন্তব্য করার একদিন পরই মি. ইনুর কাছ থেকে একই ধরনের মন্তব্য আসলো।
এবার আসুন শিরোনামের অালোকে উক্ত দুই দেশ নিয়ে একটু পর্যালোচনা করি।যাতে করে তৃণমূল থেকে উঠে
আসে প্রকৃতপক্ষে সহানুভূতির হকদার কে বেলুচিস্তান না কাশ্মীর? বেলুচিস্তান দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ।
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম এই প্রদেশটির আয়তন ৩,৪৭,১৯০ বর্গকিলোমিটার এবং এটি পাকিস্তানের মোট আয়তনের প্রায় ৪৮% গঠন করেছে। বেলুচি জাতির লোকদের নামে অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে। এর পশ্চিমে
ইরান (ইরানি বেলুচিস্তান), উত্তরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, পূর্বে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশ এবং
দক্ষিণে আরব সাগর ।ইতিহাসের বিভিন্ন ধারা মাড়িয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সাথে
যুক্ত হতে সম্মত হয়। ১৯৫২ সালে বেলুচিস্তান ছিল পাঁচটি জেলা ও চারটি প্রাক্তন রাজ্যের সমষ্টি। জেলাগুলি হল কুয়েতা-পিশিন, সিবি, জোব , লোরালাই , এবং চাগাই । আর প্রাক্তন রাজ্যগুলি হল কালাত , লাস-বেলা , খারান এবং মাকরান। ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে বাকী প্রদেশ ও রাজ্যগুলির সাথে বেলুচিস্তানকে যুক্ত করে পশ্চিম
পাকিস্তান প্রদেশ গঠন করা হয়।সেই থেকে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হয়ে আছে। তাদের প্রতি পাকিস্তান কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে এরকম নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না। ১৯৫৮ সালে কালাত রাজ্যের শাসক পাকিস্তানের সাথে বেলুচিস্তানেরএই সংযোজন প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করলেও তারএই বিদ্রোহ শীঘ্রই দমন করা হয়।সেই থেকে কোনো কোনো সময় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের নামে বেলুচিস্তানে সেনা অভিযান চালানো হলেও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কোনো দায়িত্বশীল দেশি-বিদেশি মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তুলে ধরতে পারেনি।তাছাড়া অনেক সূত্র থেকে প্রতিয়মান হয় বেলুচিস্তানে গুটিকয়েক যেসব লোক বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টির চেষ্টা করে তা মূলত ভারতের প্ররোচনা ও ইন্ধনের কারণেই।অথচ বেলুচিস্তানের জনগণ পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাসী।তাছাড়া শত শত ভারতীয় গোয়েন্দা ইরান ও ভারত সীমান্ত দিয়ে বেলুচিস্তানে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান করছে ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগ রয়েছে।এমনকি
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনী বহু ভারতীয় গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে।এদের অনেকেই মুসলিম পরিচয় ধারণ করে বেলুচিস্তানে অবস্থান করছিল।সুতরাং ভারতীয় সুরে বেলুচিস্তানকে বাংলাদেশে ৭১ এর মতো অবস্থার
সাথে তুলনা করাটা ভারতের আজন্ম স্বার্থ হাসিলের পথকেই সুগম করে। কারণ ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান
( বাংলাদেশ),পশ্চিম পাকিস্তান,পাঞ্জাব,সিন্ধু,বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে দ্বিজাতি তত্ত্ব তথা ইসলামী
জাতীয়তাবাদের অাদর্শকে অবলম্বন করে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত হবার পর থেকেই ভারতের গা চুলকানির উদ্ভব
ঘটায়।আর তার উপর অারো কেরোসিনঢালা হয় কাশ্মীর ইস্যুটি। কাশ্মীরের মুসলিম প্রধান অংশের নাম কাশ্মীর এবং হিন্দু প্রধান অংশের নাম জম্মু। তবে দুই অংশের মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় মুসলিম প্রধান হলেও এর শাসক ছিলেন
হরি সিং নামে এক হিন্দু যাকে বলা হতো ‘ডোগরা রাজা’। তিনি ১৯২৫ সালে কাশ্মীরের রাজা হন। ১৯৪৭ সালে ভারতের
স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক। ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন,অথবা তাঁরা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসনকাজ চালাতে
পারবেন। হরি সিং ভারত বা পাকিস্তান এর কোনোটিতেই যোগদান না করে রাজা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার
অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। এটি পাকিস্তান মেনে নিলেও ভারত মেনে নিল না। ১৯৪৭ সালের ২৫ অক্টোবর হরিসিং কাশ্মীরের ভারত ভুক্তির চুক্তিতে সই করেন। ২৭ অক্টোবর তা ভারতের গভর্নর- জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়। কথিত আছে যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বান্ধবী লেডিমাউন্ট ব্যাটেনের প্রভাবে ও ভারতের কূটকৌশলে শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। চুক্তি সই হওয়ার পর, ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশকরে। ১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর পাকিস্তান-সমর্থিত আদিবাসীরা কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। ভারতের সৈন্য নামানোর
সংবাদ পেয়ে পাকিস্তানও কাশ্মীরে সৈন্য প্রেরণ করল এবং ভারতীয় সৈন্যদের হটিয়ে দিয়ে কাশ্মীরের অংশবিশেষ দখল করল। ১৯৪৭- ১৯৪৮ সালের দিকে এই দুই দেশের মাঝে কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টিতে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করে। এই মধ্যস্থতা ভারত মেনে না নিলে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ শুরু হয় । ১৯৬৬ সালের ১০ ই জানুয়ারী বর্তমান রাশিয়া
তাসখন্দচুক্তির মাধ্যমে সে যুদ্ধের নিষ্পত্তি ঘটাতে সক্ষম হলেও ১৯৭১ সালে আবার তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।অার এভাবেই পাডা-পুতার ঢলাঢলিতে( বহিরাগত দুই দেশের গোলাগুলিতে) ভূস্বর্গের স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরের মানবতা চরমভাবে
ভূলন্ঠিত। কাশ্মীরের জনগণের অাজন্ম দাবী স্বাধীনতার।কারো অধীনে থাকতে নারাজ তারা।কিন্তু ভারত তাদের
স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখতে গড়ে প্রতি ১০০০ কাশ্মীরীর জন্য ২০জন ভারতীয় সৈন্য লাগিয়ে রেখেছে।
প্রতিটি কাশ্মীরী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি গড়ে ৫ জন ধরা হয় তবে অর্থ দাঁড়ায়, যে গ্রামে ২০০ ঘর মানুষের
বাস সেখানে অবস্থান নিয়েছে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য। কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর বিশাল অবস্থান ১৯৪৭ সাল
থেকেই। তবে সে সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বেড়েছে ১৯৮৯ সালে। কারণ তখন থেকেই কাশ্মীরে ভারতপন্থি শেখ আব্দুল্লাহ পরিবারের প্রভাব ব্যাপক ভাবে লোপ পায় এবং তীব্রতর হয় স্বাধীনতার দাবী। সে দাবী এখন প্রতিদিন তীব্রতর হচ্ছে এবং সে সাথে দিন দিন বাড়ছে সৈন্য সংখ্যা। কাশ্মীর আজ অশান্ত এবং দেশটিতে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে অবিরাম রক্ত ঝরছে মূলত স্বাধীনতার ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই। কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা আন্দোলন কতটা তীব্র আকার ধারণ করেছে সেটা বুঝানোর জন্য প্রখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক অরুণদ্ধুতি রায় লন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ানে কয়েক বছর আগে যে নিবন্ধ লিখেছেন সেটি তথ্যবহুল। তিনি লিখেছেন, গত ১৫ই আগস্ট ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। সেদিন শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থল লালা চক দখলে নিয়েছিল বিশাল জনসমুদ্র। তারা আওয়াজ তুলছিল ‘জিয়ে জিয়ে পাকিস্তান’। অর্থাৎ পাকিস্তান
জিন্দাবাদ। স্লোগান তুলছিল, ‘হাম কেয়া চাহতে হেঁ?’ (আমরা কি চাই?)জনতার মুখে জবাব ছিল ‘আজাদি’ (স্বাধীনতা)। জিজ্ঞাসার সুরে স্লোগান উঠছিল, ‘‘আজাদি কা মতলব কেয়া (অর্থ: স্বাধীনতার লক্ষ্য কি?) জনতা সমস্বরে জবার দিচ্ছিল-
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আওয়াজ উঠছিল, পাকিস্তান ছে রিশতা কিয়া? (অর্থ: পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি?) জনতা জবাব দিচ্ছিল, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’। তারা বলেছে, ‘‘এ্যায় জাবেরো, এ্যায় জালেমো! কাশ্মীর হামারা ছোড় দো’’ অর্থ: ‘‘হে অত্যাচারী, হে মজালেম! আমাদের কাশ্মীর ছেড়ে দাও।’’ অরুন্ধতী রায় আরো লিখেছেন, তারা আরো বলেছে, ‘‘ভুখানাঙ্গা হিন্দুস্তান, জানছে পেয়ারা পাকিস্তান।’’১৫ই আগস্টে সবুজ পতাকা ছেয়ে ফেলেছিল শ্রীনগর শহর। অথচ
ভারতের স্বাধীনতার এ দিনটিতে ভারতের পতাকা শোভা পাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। ঐ দিনকে ‘গোলামীর দিন’ রূপে ধ্বনিত করছিল। জনতার ঢল নেমেছিল শুধু শ্রীনগরে নয়, শহরতলীর গ্রামগুলোতেও। বাস, টেম্পো, ট্রাক, মটর সাইকেল ও রিকশায় চেপে মানুষের ঢল নেমেছিল শ্রীনগরের রাজ পথে। ভারতপন্থি দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল
কনফারেন্স ও পিপলস’ ডিমোক্রাটিক পার্টির নেতাদের দিল্লিস্থ টিভি স্টুডিওতে দেখা গেলেও তাদের কারো সাহস ছিল না শ্রীনগরের রাজপথে নামার। মনে হচ্ছিল, জনগণ যেন নতুন ভাবে নিজেদের আবিষ্কার করেছে। লোপ পেয়েছে ভয়,
জেগে উঠেছে তাদের প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। অরুন্ধতী রায়ের কথায় মনে হয়, ফিলিস্তিনীদের ইন্তেফাদা (গণঅভ্যুত্থান) যেন নেমে এসেছে শ্রীনগরের অলি-গলিতে। ফিলিস্তিনী শিশু ও যুবকেরা যেমন নির্ভয়ে পাথর ছুড়ে ইসরাইলী আর্মির টহলদার গাড়ির উপর, তেমন চিত্রম শ্রীনগরেও। শহর জুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির শোভা পাচ্ছে সবুজ পতাকা। শ্রীনগর শহরের যেন নতুন সাজ। ভারতীয় গণতন্ত্র ওস্বাধীনতার প্রসঙ্গ তুললে মহিলারা তারস্বরে বলে, কিসের স্বাধীনতা? ভারতীয় সৈন্যদের হাতে ধর্ষিতা হওয়ার স্বাধীনতা? তবে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পথে শুরু হলেও ভারতী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য
সেটিকে শান্তিপূর্ণ থাকতে দেয়নি। ইতিমধ্যে বহু নিরীহ নাগরিককে তারা হত্যা করেছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে গুলিবর্ষণের ঘটনা। ভারতীয় সেনারা শ্রীনগর শহরে কারফিউ জারি করছে, কিন্তু কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল হচ্ছে। এবং প্রাণও দিচ্ছে। এ প্রাণদান গণ্য হচ্ছে পবিত্র শাহাদাৎ রূপে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় কাশ্মীরে ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন যেন দিন দিন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। স্বাধীনতার দাবিতে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে বিচ্ছিন্নতাবাদী ট্যাগ লাগিয়ে
গুলি করে খুন করা হচ্ছে। শুধু পুরুষরাই নয়, রেহাই পাচ্ছেনা নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই। এ ঘটনাগুলার বেশিরভাগই ঘটছে জম্মু এবং কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে। যখনই ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী কাউকে হত্যা করছে বিচার না পাওয়ায় তখনই অন্যরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে এবং নিরস্ত্র শিশুরা গুলির জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছুঁড়ছে। ট্যাঙ্ক সহ সামরিক বহর ওয়ালা ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র বাহিনীর দিকে কিছু শিশুর পাথর ছোড়া এতটাই বিপজ্জনক
যে,সে কারণেই এ কে ৪৭ দিয়ে নির্বিচারে ব্রাশ ফায়ার করে সৈন্যরা তার জবাব দিচ্ছে। একইসাথে কাশ্মীরের রাজ্যশাসক ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর এ গুলিবর্ষণকে আত্মরক্ষার কথা বলে ন্যায্যতা দিয়ে
যাচ্ছে!হারামিরও এএকটা শেষ থাকে। নিরস্ত্র কিছু শিশু একটা সুসজ্জিত বাহিনীর জন্য হুমকি- বিশ্বকে এখন এটাও মেনে নিতে হবে। অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণও বেড়ে চলেছে। কাশ্মীরি নারীদের গুম করে নিয়ে ধর্ষণ করে ইন্ডিয়ার সেনারা।
আবার খোলামেলা সবার সামনেই গণধর্ষণ করছে তারা। এটা সেখানে এখন খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইনডিপেন্ডেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উনিশশ একানব্বই সালের বাইশে ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ার
সেনাবাহিনীর একটা দল কুনান পুশপরা গ্রামে এসে প্রথমে নারী ও পুরুষদের আলাদাভাবে আটক করে। এরপর চৌদ্দ
থেকে একশ বছর বয়সের অন্তত তেইশ জন নারীকে তাদের স্বামী, সন্তান বা বাবার সামনে গণধর্ষণ করে। গত ২০১০
সালের পয়লা এপ্রিল জম্মু কাশ্মীরের পুলিশ জানিয়েছে, নভেম্বর দুই হাজার দুই থেকে জুলাই দুই হাজার আট সাল
পর্যন্ত ছয় বছরে ইন্ডিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে ৫১ জন নারী ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। কাশ্মীরের রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশন স্টেট হিউমেন রাইটস কমিশন (এসএইচআরসি) ২০০৮-২০০৯ বছরে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ৪০৪ টা মামলা করেছে। যার মধ্যে ৬ টা ধর্ষণ, ৪৩ টা নিখোঁজ এবং ৯ টা পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা অন্যতম। ২০১০ সালের জুন মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় দখলদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ১০২ জনের মৃত্যু হয়। এদের কেউ তথাকথিত সশস্ত্র জঙ্গি নন এবং মৃতদের মধ্যে শিশু ও কিশোরও আছে। ভারতীয় জঙ্গি বাহিনীর এ নির্দয় নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকিত স্লোগান দিয়েছে। ‘ডেইলি গ্রেটার কাশ্মীর’ ২৯ জুন,২০১০
প্রতিবেদন ছাপে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত কাশ্মীরে নিহতের মধ্যে বারো জন ছিল তেরো থেকে উনিশ বছর বয়সের। তাদের মধ্যে নয় জনকেই আধা সামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। পত্রিকার পাতায় যে প্রতিবেদনগুলো ছাপা হয়েছে সেগুলা আসল ঘটনার খুবই সামান্য চিত্র। কারণ
কাশ্মীরে ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলা অপরাধ করে সে অপরাধ প্রকাশের আলামত ও উপায়ও বন্ধ করে দেয়। একইভাবে মানবাধিকার কর্মী বা সাংবাদিকদের ওপর সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে তারা তাদের সুবিধা মত বহু বিধি নিষেধ আরোপ করে রেখেছে। ফলে সেখানে ইন্ডিয়ান সেনাদের ভয়ে অত্যাচারিত হয়েও অনেক নিরীহ
মানুষ মুখ খুলতে পারে না। যে কারণে গুম,হত্যা সহ অসংখ্য হত্যা, ধর্ষণ এবং অপহরণের খবর অজানাই থেকে যায়।২০১১ সালের আগস্টে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের তিনটি এলাকায় ৩৮টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টেট হিউম্যান রাইটস কমিশন (সিএইচআরসি) গত তিন বছর ধরে চেষ্টা চালানোর পর এসব গণকবর খুঁজে পাওয়া পায়। সিএইচআরসি জানিয়েছে, এসব গণকবরে ২ হাজার ১৫৬টি লাশ পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয় ৯০ এর গণ আন্দোলনের গণহত্যার লাশ এগুলি। শ্রীনগরভিত্তিক সংগঠনটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী উনিশশ উননব্বই সাল থেকে এ পর্যন্ত কাশ্মীরে আট হাজার লোক গুম হয়েছে। ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে ফেরত দেয় নাই। এবং এরপর
তাদের আর কোন খোঁজও পাওয়া যায়নাই। সংগঠনটি তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেখাচ্ছে, উত্তর কাশ্মীরের বান্ডিপুরা, ব্যারামুল্লা ও কুপওয়ারা জেলার পঞ্চান্নটা গ্রামে ২ হাজার ৭০০টা অজ্ঞাত ও অশনাক্ত গণকবর আছে। এগুলো শনাক্ত করে লাশ উদ্ধারে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত পরিষদ গঠনে শ্রীনগর সরকার ও দিল্লি সরকারের কাছে আহবানও
জানিয়েছিল আইপিটিকে। ১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারি গাজা উপত্যকায় সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছিল এক ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে মিছিল করে নিরস্ত্র মুক্তিকামী কাশ্মীরি জনগণ। কিন্তু ইন্ডিয়ার সেনাসহ রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী মিছিলটিতে নির্বিচারে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে প্রায় ১০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। গোয়াকাডাল ব্রিজে সংঘটিত সেই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের বীভৎস স্মৃতি আজও
তাড়িয়ে বেড়ায় কাশ্মীরের জনগণকে। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত চলছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এসব অবিচার এবং খুনের ঘটনার জন্য এ পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয় নাই। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিটা খুনই জনমনে ক্ষোভ তৈরি করেছে। যেখানে একদিকে ইন্ডিয়ান সেনাদের জুলুম, নির্যাতন,
হত্যা, ধর্ষণ আরেক দিকে কাশ্মীর রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর দমন পীড়ন, রাজ্যের বেআইনি হত্যাকান্ড ও
অন্যায় নিপীড়ন সমান তালে চলছে কাশ্মীরে। মোটকথা এসব ঘটনা কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ, প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আরো শক্তিশালী করে তুলছে। কাশ্মীরে এ পর্যন্ত ঠিক কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, কি পরিমাণ বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কত সংখ্যক মানুষকে নিরাপত্তা বাহিনী ধরে নিয়ে
ফেরত দেয় নাই তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। নানা পক্ষ থেকে নানা পরিসংখ্যান দাবি করা হয়েছে। কাশ্মীরের
স্বাধীনতার প্রচারণা সংগঠন কাশ্মীর আমেরিকান কাউন্সিলও (কেএসি) একটা পরিসংখ্যান করেছে। তাতে তারা দাবি করেছে, স্বাধীনতা আন্দোলনের গত বিশ বছরে নারী, শিশু ও যুবক মিলিয়ে এক লাখ নিরীহ কাশ্মীরি ইন্ডিয়ান সেনা এবং
রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে খুন হয়। স্থানীয় এনজিও আইপিটিকের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর উপত্যকায় ইন্ডিয়ান সৈন্যদের হাতে নিহতের সংখ্যা সত্তর হাজারেরও বেশি।এভাবে সুষ্ঠু পরিসংখ্যান চালােত পারলে লাখকেও ছাড়িয়ে যাবে।গত কয়েকদিনে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী তরুণ নেতা বুরহান
ওয়ানিকে হত্যার জের ধরে কাশ্মীরের অাবারো জেগে উঠে। স্বাধীনতার দাবীতে রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের স্বাধীনতাকামী জনতা।তাদের স্বাধীনতাকে দাবিয়ে রাখতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যবহার করে কামান,গুলি।এ ইস্যুতে এ পর্যন্ত ৭০জন কাশ্মীরি শাহাদত বরণ করে।এভাবে ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরকে অার কত রক্ত দিলে, আর কত শিশু,নারী হত্যা হলে হাসানুল হক ইনুদের মত লোকেরা কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা দাবীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে?
লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক, তরুণ আলেম
লেখকের ফেসবোক প্যাজ ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন