কোরবানীর তাৎপর্য


পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে, যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। যেমন আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,  وما خلقت ا لجن و ا لا نس الا ليعبدون অর্থ: ‘ আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে। আল্লাহ তায়ালা্ এবাদতের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করলেন।
ইবাদত বলে-
যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, হোক সে কাজ প্রকাশ্য বা গোপন। আর ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাঁর উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা। এ কাজটি তিনি শুধু তাঁর উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
কুরআন শরীফের সূরা আনআমের 162-163 নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, বল, আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ: বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন, যে সকল মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবাই করে তাদের যেন জানিয়ে দেয়া হয়, আমরা তাদের বিরোধী। সালাত, কোরবানী শুধু তাঁর নামেই হবে যার কোন শরিক নাই।এ কথায় আল্লাহ তায়ালা সূরা কাওসারে বলেছেন, فصل لربك وانحر অর্থ: তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানী কর।
অর্থাৎ তোমার সালাত ও কোরবানী তারই জন্য আদায় কর। কেননা, মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশ্যে প্রার্থণা করে ও পশু জবেহ করে। আর সকল কাজে এখলাস অবলম্বন করতে হবে। এখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে।
যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করবে তার ব্যাপারে শাস্তির কথা হাদিসে এসেছে।
আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিথ। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবী তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল, নবী সা: গোপনে আপনাকে কি বলেছিলেন? বর্ণনা কারী বলেন, আলী রা: এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী করীম সা: মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেন, (হাদিসের অর্থ) ১। যে ব্যক্তি তার পিতা মাতাকে অভিশাপ দেয়, আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন। ২। যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে, আল্লাহ তার উপর লা’নত করেন। ৩। ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা’নত করেন, যে ব্যক্তি কোন বেদআতীকে প্রশ্রয় দেয়। ৪। যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা’নত করেন। ( মুসলিম শরীফ)
এ কাজগুলো এমন, যে ব্যক্তি তা করল যে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী রহ: বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল। এ ধরনের যত জবেহ হবে সব না-জায়েয ও তা খাওয়া হারাম। জেবহ কারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক। যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সূরায়ে মায়িদার ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে জবেহকৃত পশু, আর শ্বাস রোধে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু, তবে যা তোমরা জবেহ করতে পেরেছ তা ব্যতীত, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এ সব হল পাপ কার্য।
  


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কোরবানীর আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, কোরবানীর সূচনা।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড শিখুন।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী