স্বাগতম মাহে রমজান
দিন যায় মাস আসে, মাস যায় বছর আসে, চন্দ্র-সূর্যের আবর্তনে, দিবস-যামিনীর বিবর্তনে, সময়ের চাকা ঘুরে আবারো আমাদের দোয়ারে এসে কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। আর কটা দিন পরেই রমজানের সিয়াম সাধনা শুরু হবে পুরো উম্মতে মোহাম্মাদীর মধ্যে। কিন্তু সে বরকতময় মাসকে বরণ করতে আমরা কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করছি? রমজানের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারনা রয়েছে তারা এ মোবারক মাসকে বরণ করার জন্য এমন অধিক আগ্রহভরে অপেক্ষা করতে থাকেন, যেমন অতি আপনজন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সম্মানিত কোনো মেহমানের আগমনের প্রতিক্ষা করা হয়।
সাহাবাগণ রমজান মাস পাওয়ার জন্যে ছয় মাস পূর্ব থেকে আল্লাহর কাছে দুআ করতেন। অতঃপর রমজানের ইবাদত বন্দেগি কবুুল করার জন্য বাকী ছয় মাস পর্যন্ত দুআ করতেন। আমাদের আকাবির আসলাফগণ রমজানের প্রতিক্ষায় থাকতেন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ)এ মাসের জন্য দুআ করতেন, “ হে আল্লাহ! তুমি রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছে দাও” রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি রজব ও শাবান মাসে রোজা রাখতেন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি প্রিয় নবীকে রমজানের পরে সব চেয়ে বেশি শাবান মাসে রোজা রাখতে দেখেছি।
( বুখারী ও মুসলিম)
এই রমজান মাসে শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়, যাতে বান্দাদেরকে কুমন্ত্রণা দিতে না পারে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে! যে, শয়তানকে যদি শিকল দ্বারা বেধে রাখাই হয় তাহলে রমজান মাসে মানুষের দ্বারা গোনাহ সংঘটিত হয় কেন? উত্তর একদম সহজ! আপনি যখন আপনার বাসায় ফ্যান চালান ফ্যানটা যদি আপনি বন্ধ করতে চান তাহলো নিশ্চয় সুইচ অফ করেন, তাতে কি সাথে সাথেই ফ্যান বন্ধ হয়ে যায়? নিশ্চয় না। তেমনি দীর্ঘ এগারোটি মাস আমরা গোনাহ করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌছে গেছি যে, শয়নতান বাধা থাকা সত্তেও আমরা প্রতিনিয়ত গোনাহ করছি। অর্থাৎ শয়তান আমাদেরকে এমন চাবি মেরে দিয়েছে যে, আমরা রমজান মাসেও গোনাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারিনা, গোনাহ ছাড়ার চেষ্টাও করিনা। কথাটি আরো একটু সহজ করে দিচ্ছি, হাদিসে এরশাদ হয়েছে, রাসূল স. বলেন, “ হে মানব জাতী! তোমাদের মাঝে পবিত্র রমযান মাস সমাগত এবং আল্লাহ তোমাদেরকে এই মাসে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আর এই মাসে বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্কলাবদ্ধ করে দেওয়া হয় আর এই মাসেই আছে কদরের রাত্রি যেটি হাজার মাস থেকে উত্তম এবং যে ব্যক্তি এই মাসের অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হলো সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই বঞ্চিত, দুর্ভাগা” ( মুসনাদে নাসাঈ ২৩০ হাদিস নং ৭১৪৮)
এই হাদিসে থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, শয়তানকে অবশ্যয় বেধে রাখা হয়। একটি উদাহরণ দিলে হয়ত সহযে বোঝতে পারবেন! বাগের কথায় ধরুন! যে বাঘটি মুক্ত তার পক্ষে মানুষ হত্তা করা সহজ। কিন্তু এই বাঘটি যখন খাঁচায় থাকে তখন কিন্তু আপনি ঐ বাঘ হতে নিরাপদ। তবে আপনার নিরাপদটা নির্ভর করবে যতটুকু দুরুত্ব আপনি বাঘের সাথে করেছেন। বাঘ বাধা থাকা অবস্থায় যদি আপনি বাঘের কাছে চলে যান। তাহলে কিন্তু আপনি নিরাপদ না। এমনি ভাবে আপনি যদি শয়তানকে দুরে রাখেন তাহলে আপনি নিরাপদ। অন্যথায় নয়।
রমজান মাসে পানাহার বন্ধ অথচ শহর-গ্রামের প্রত্যেকটি হোটেল রেস্তোরায় ঢুকলে দেখা যায় অনেক মানুষ দিনের বেলাই খানা খাচ্ছে। হোটেলে ডোকলে বুঝাই যাইনা যে, এটা রমজান মাস অতিবাহিত হচ্ছে। যে মাসের জন্য রাসূল সাঃ দোয়া করতেন।
জীবন গঠনের অপূর্ব সুযোগ
আমরা রমজান মাসে রোজা রেখে সংযম পালন করি, কিন্তু ও দিকে এই একমাস ব্যতীত লাগাতার ১১টি মাস আমরা শয়তানের প্ররোচনায় নিজেদের কর্তব্যকে ভুলে থাকি এবং মনের মাঝে আল্লাহর স্মরণ ভুলে শয়তানকে স্থান দেই। তাই একমাসে মানবরুপী এই ইঞ্জিনটাকে পরিচালনার জন্য ডিজেল ভরে বাকী ১১ মাস চলার উপায় করে নিতে হবে। যদি আমরা বাকী ১১ মাস নিজের মন পরিচালিত দেহটাকে সঠিক রাস্তায় চালাতে চাই, তাহলে এই রমজান মাসে আমাদের উচিৎ হবে আত্মশুদ্ধিমূলক কয়েকটা আমল অতিগুরুত্বসহকারে পালন করা। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, “ রোজা ঢালস্বরুপ- যতক্ষণ একে ফেড়ে না ফেলা হয়।” ( বোখারী, হাদীস নং ১৭৭১) ঢাল হবার অর্থ হল, মানুষ যেভাবে ঢাল দ্বারা নিজেকে হিফাজত করে, ঠিক তেমনি রোজার দ্বারাও নিজের দুশমন অর্থাৎ শয়তান হতে আত্মরক্ষা করে। জনৈক সাহাবা জিজ্ঞাসা করলেন, “রোজা কোন জিনিসের দ্বারা ফেড়ে যায়?” রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘মিথ্যা ও গীবতের দ্বারা’ আমরা বর্তমান সমাজে গীবতকে আর গোনাহ মনে করিনা। গীবত করতে আমাদের সবারই পছন্দ হয়। অথচ গীবত করা মানে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান। আমরা সে হাদিস মনে রাখিনা, আর মনে রাখলেও পালন করি না।
ইবাদতের মৌসুম
নবান্নের উৎসব, ঘ্রান ও স্বাদ অগ্রহায়নেই যেমন ভোগ করা যায় অন্য মাসে তা হয় না। ফল ফলাদি বা কাঁচা তরিতরকারী বেলাও একই যেমন আম বৈশাখে, তাল ভাদ্রে-শাকশব্জি ও ধনিয়া পাতার ঘ্রাণ আর মজা শীতকালে মৌসুম চলে গেলেও অন্য মাসে এগুলো পাওয়া যায় কিন্তু ঘ্রাণ ও মজা এক নয়, লিচুর মৌসুমে লিচু খেতে যেমন মজা অন্য মাসে সংরক্ষিত লিচুর মজা কি সে রকম? নিশ্চয় না। তাই মৌসুম ব্যতিত সেরকম স্বাদ বা লাভবান হওয়া যায় না।
রজব, শাবান ও রমজান মাস এ তিন মাস ইবাদতে মৌসুম। যা অন্য মাসে এমন মজা পাওয়া যায় না। আল্লাহ পাক রজব মাসে রাসূল সাঃ কে মে’রাজের মাধ্যমে তাঁর দিদার লাভ করান। ইসলামের দৃষ্টিতে চার মাস খুন-খারাবী তথা যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণ সিষিদ্ধ বা হারাম, রজব মাস তার একটি। উহা অতীব সম্মান ও ফজিলতের মাস। এ মাস একান্ত ইবাদতের মাস। এর পর শাবান মাসকে বলা হয় বরাত বা ভাগ্যের মাস। পবিত্র শাবান মাসের পরেই হলো মহামন্বিত রমজান মাস। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহান মাস রমজান। অধিক এবাদতে মাস, এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেয়া কর্তব্য। আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা রাঃ বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ শাবান মাসের দিন তারিখের এত হিসাব রাখতেন যতটা হিসাব অন্য মাসে রাখতেন না।
রমজান মাস মু’মিন বান্দাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে এক বিরাট হাদিয়া।
পাপী বান্দাকে গোনাহমুক্তির আহবান নিয়ে হাজির হয় এ মহামান্বিত মাস। এ মাস আসার সাথে সাথে আকাশ থেকে একজন ফেরেশতা অবিরত ঘোষনা করতে থাকে- ‘ হে কল্যাণ প্রত্যাশী! নেককাজে অগ্রসর হও, হে খারাপকাজে লিপ্ত ব্যক্তি! এবার তুমি ক্ষান্ত হও। ( মেশকাত)
সুতরাং কোন বান্দা যদি পাপময় জীবনকে পূণ্যময় জীবনে পরিবর্তন করতে চায় তাহলে তার জন্য রমজান মাসই হলো উত্তম সময়। কেননা এ মাসে দিবা-রাতের প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার অজস্র রহমত ও বরকতের বারী বর্ষিত হয়। ফলে এই মাসে গোনাহ খাতা কম হয়। ইবাদতের প্রতি বান্দার আগ্রহ বাড়ে। তা ছাড়া মানুষের সুন্দর ও পূণ্যময় জীবন গঠনের পথে যে শয়তান সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধক, সেই অবাধ্য শয়তানকে এ মাসে বেঁধে রাখা হয়। তাই রমজান মাস মানুষের জীবন গঠনের অপূর্ব সুযোগ। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহ পাক এ মাসে ইবাদত বন্দেগিও বেশি রেখেছেন এবং সোয়াবের পরিমাণও বেশি রেখেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে
‘ যে রমজান মাসে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্যমাসে একটি ফরজ আদায় করল। ( মেশকাত) সুতরাং রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত করে জীবনের গতিকে পাল্টে দিতে হবে। পাপময় জীবনকে করতে হবে পূণ্যময়। দুনিয়ামুখি জীবনকে করতে হবে আখেরাতমুখি।
ইসলামী বার মাসের মধ্যে রমযান মাসের মর্যাদা ও ফযিলত সর্বাধিক। এ মাসের সাথে অন্য কোন মাসের তুলনাই করা চলে না। পবিত্র কুরআনের কয়েক স্থানে এ মাসের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। রমযান শরীফের পূর্ণ এক মাসের রোযা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। এবং রাতে বিশ রাকাত তারাবিহ নামায সুন্নতে মোয়াক্কাদা সাব্যস্ত করা হয়েছে। আবার গোটা মাসের তারাবীহ নামাযে পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করাও সুন্নত। এ মাসের অতুলনীয় ফযীলতের কারণে যে কোন ইবাদতে অন্য মাস অপেক্ষা ৭০ গুন বেশী সওয়াব হাসিল হয়। কাজেই এ মাসে যত বেশী ইবাদত করা যায় ততই মঙ্গল।
এ মাসটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বড়ই রহমত ও বরকতের মাস। এ মাস ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা শিক্ষার মাস। আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করার মাস। পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস। এ জন্য এ মাসে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা, পবিত্র কুরআনে মর্ম অনুধাবন করা, কুরআনের বিভিন্ন তফসীর অধ্যায়ন করে তার অর্থ ও হাকীকত উপলব্ধির চেষ্টা করা উচিত।
আল্লাহর রহমত বান্দার প্রতি এ মাসে বেশী অবতীর্ণ হয়। এ জন্য এ মাসে সব দিক দিয়ে আত্মার পবিত্রতা অর্জন প্রচেষ্টার সঙ্গে কুরআন পাঠ ও কুরআন চর্চা করা কর্তব্য।
এক্ষেত্রে যারা হাফেজ দ্বারা তারাবীতে কুরআন খতম করবেন বা শুনবেন তারা দান খয়রাত দ্বারা আল্লাহর পথে মাল খরচ করে উক্ত হাফেজদেরকে আর্থিক সাহায্য করবেন, আলেমদের মর্যাদা রক্ষা করবেন। কিন্তু স্বরণ রাখবেন, এ কাজ যেন তাদের কুরআন পাঠের বিনিময়ে প্রদানের নিয়ত না হয়। কিছু পয়সার লোভে চুক্তি করে কুরআন পাড়া উচিত নয়। কুরআন পড়া একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যেন হয়। আর শ্রোতারাও সাহায্য করবেন আল্লাহর ওয়াস্তে, আলেম ও হাফেজদের মর্যাদারক্ষার্থে।
রমযানের শেষভাগে আল্লাহ তায়ালা কদরের রাত নিহিত রেখেছেন। সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রমযানের শেষ দিনের কোন এক বেজোড় রাত্রে শবে কদর হবে। এ রাত সম্পর্কে সুরা কদরে বলা হয়েছে, এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
রমযান শব্দটির অর্থ হল জ্বালিয়ে দেয়া। এ মাসের নাম রামাযান এজন্য রাখা হয়েছে যে,।এ মাসে আল্লাহ তায়ালা নিজ মেহেরবাণীতে গোনাহ সমুহকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেন। মানুষ যেন এক নব জীবন লাভ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা তথা সাওম ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাকওয়াবান হতে পার। এ কতিপয় নির্দিষ্ট দিনের রোযা।যদি তোমাদের কেউ হয়ে থাকে রোগাগ্রস্থ অথবা মুসাফির তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে। আর যাদের রোযা রাখার সামর্থ আছে (এরপরও রাখে না ) তারা যেন ফিদিয়া দেয়। একটি রোযার ফিদিয়া একজন মিসকিকে খাওনো।
আর যে ব্যক্তি সেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশী সৎকাজ করে, তা তার জন্য ভালো। তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয় অনুধাবন করে থাকো তাহলে তোমাদের জন্য রোযা রাখাই ভালো। (সুরা আল বাকারা, আয়াত ১৮৩) মুসলমানদের প্রতি রোযা ফরয হওয়ার নির্দেশের সাথে সাথে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোযা শুধুমাত্র তোমাদের প্রতিই ফরয করা হয়নি। তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও ফরয করা হয়েছিল। এর দ্বারা যেমন রোযার বিশেষ গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। তেমনি মুসলমানদের এমর্মে একটা সান্তনাও দেওয়া হয়েছে যে, রোযা একটি কষ্টকর ইবাদত সত্য, তবে তা শুধুমাত্র তোমাদের উপরই ফরয করা হয়নি, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর উপরও ফরয করা হয়েছিল। কেননা, সাধারনতঃ দেখা যায়, কোন একটি কঠিন কাজে অনেক লোকে একই সাথে শরীক হলে তা অনেকটা স্বাভাবিক এবং সাধরণ বলে মনে হয়। (রুহুল মাআনী)
কোরআনের বাক্য “ মিন কাবলিকুম ” অর্থাৎ, যারা তোমাদের পূর্বে ছিল, ব্যাপক অর্থবোধক। এর দ্বারা হযরত আদম(আ.) থেকে শুরু করে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল উম্মত এবং শরীয়ত কেই বুঝায়। এতে বোঝা যায় যে, নামাজের ইবাদত থেকে যেমন কোন উম্মত বা শরীয়তই বাদ ছিল না, তেমনি রোযাও সবার জন্যই ফরয ছিল।
আয়াতের মধ্যে শুধু বলা হয়েছে “ রোযা ” যেমন মুসলমানদের উপর ফরয করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী উম্মতগণের রোযা সমগ্র শর্ত ও প্রকৃতির দিক দিয়ে মুসলমানদের উপর ফরযকৃত রোযারই অনুরুপ ছিল। যেমন রোযার সময় সীমা, সংখ্যা এবং কখন তা রাখা হবে, এসব ব্যাপারে পূর্ববর্তী উম্মতগণের রোযার সাথে মুসলমানদের রোযার পার্থক্য হতে পারে, বাস্তব ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই। বিভিন্ন সময়ে রোযার সময় সীমা এবং সংখ্যার ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়েছে।
রাসুল (সাঃ) বলিয়াছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “প্রত্যেক নেকীর ফল আমি দশ হইতে সাতশত গুন পর্যন্ত দিয়া থাকি, কিন্তু রোযার ব্যাপারে অন্যরুপ। যেহেতু একান্তভাবেই আমার জন্য ; এইজন্য আমি স্বয়ং উহার প্রতিদান আমার নিজ হাতেই দিয়া থাকি।
রাসুল সঃ আরো বলেন, যার হাতে আমার জীবন- মরন সেই আল্লাহর শপথ! রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশ্ক আম্বরের খুশবোর চেয়েও প্রিয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন, বান্দা আমারই জন্য খাওয়া পানকরা এবং যৌন সম্ভোগ সুখ পরিত্যাগ করিয়া রহিয়াছে সুতরাং তাহাদের এই আমলের বদলা আমি আমার নিজ হাতে দিব।
রাসূল সাঃ হযরত বিবি আয়েশাকে বলিয়াছেন, সর্বদা বেহেশতের দরজায় কড়া নাড়িতে থাক। হযরত আয়েশা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, ইহা কিভাবে? জবাবে রাসূল সাঃ বলিয়াছেন, অত্যাধিক উপবাস দ্বারা।
আল্লাহর রাসূল সাঃ বলিয়াছেন, শয়তান যদি আদম-সন্তানের অন্তরের চারিদিকে ঘুড়িয়া না বেড়াইত, তবে মানুষ ঊর্ধ্বজগতের মহিমারাশি দেখিতে পাইত।
রোজার ফযিলতঃ
রোজা মুসলমানদের উপর ফরজ। রোজা অস্বীকারকারী কাফের এবং বিনা ওযরে পরিত্যাগকারী ফাসিক। আল্লাহ পাক বলেন, “ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে খোদাভীরু ও সংযমী হও। (আল কুরআন)
আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেন, রমজান মাস, ইহাতেই কুরআন মজীদ নাযিল হয়েছে, তা গোটা মানব জাতির জন্য জীবন-যাপনের বিধান এবং তা এমন সুষ্পষ্ট উপদেশাবলিতে পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিস্কাররুপে তুলে ধরে। ( বাকারা ১৮৫)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে, তখন আসমানের বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় ( বোখারী ও মুসলিম)
হযরত সালমান ফার্সী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহনবী সা. শা’বানের শেষ দিনে আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে বললেনে হে লোক সকল! তোমাদের সামনে এক মহান ও বরকতময় মাস হাজির হয়েছে। এ মাসের এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং রাত্রির নামায ( তারাবিহ) ছাওয়াবের বিষয় সাব্যস্ত । করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন নফল ইবাদত করল, সে ঐ ব্যক্তির মত যে ব্যক্তি অন্য মাসে কোন ফরজ ইবাদত করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন একটি ফরজ ইবাদত করল, সে ঐ ব্যক্তির মত যে অন্য মাসে ৭০ টি ফরজ আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। এটা মানুষের প্রতি সমবেদনা প্রকাশের মাস। এ মাসে মুমিনের রিযিক জীবনোপকরণ বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সেটা তার পাপমোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে, এবং ঐ রোযাদারের সমতুল্য পুণ্য লাভ করবে, অথচ এতে রোযাদার ব্যক্তির সওয়াবের কোন কমতি হবে না। সাহাবাগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সা. সকলের তো আর রোযাদারকে ইফতার করানোর মত সামর্থ নাই। মহানবী সা. বললেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে একটি খেজুর, এক চুমুক দুধ অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে, তাকেও আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন হাউজে কাওছারের পানি পান করাবেন। এই পানি পান করার পর জান্নাতে জাওয়ার আগপর্যন্ত কোন পিপাসা লাগবেনা। এ মাসের প্রথম ভাগ রহমত, মধ্যভাগ মাগফিরাত, শেষভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি এ মাসে স্বীয় দাস-দাসীর ( চাকর-চারানী)দের কাজ হালকা করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। ( বায়হাকী)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন