হযরত ইবরাহীম বিন আদহামের সন্ধানে

প্রক্ষ্যাত বুজুর্গ হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেন, একবার আমি এক শহরে গিয়া এক মসহিদে উঠিলাম। মনে মনে ভাবিলাম, রাতটা এখানেই কাটাইব। এশার নামাজের পর মুসল্লীগন একে একে সকলে বাহির হইয়া গেলে ইমাম সাহেব আসিয়া আমাকে বলিলেন, তুমি বাহিরে যাও। আমি মসজিদের দরজা বন্ধ করিব। আমি বলিলাম, আমি মুসাফির , রাতে এখানেই থাকিব। কিন্তু ইমাম সাহেব র্বিক্ত হইয়া বলিলেন, মুসাফিরগণ মসজিদের বাতি ও চাটাই চুরি করে। সুতরাং আমি কাহাকেও মসজিদে থাকিতে দিব না। এমনকি ইবরাহীম বিন আদহাম আসিলেও না। আমি বলিলাম, আমিই আবরাহীম বিন আদহাম। আমার কথা শুনিয়া ইমাম সাহেব অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে ব্যঙ্গ করিয়া বলিলেন, তোমার চেহারা দেখিয়াই তাহাই মনে হইতেছে বটে। অনর্থক বক্ বক্ করিয়া মিথ্যা বলিয়না। এই কথা বলিয়াই তিনি আমার দুই পা ধরিয়া হেঁচড়াইয়া মসজিদ হইতে বাহির করিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন।
কন্কনে  শীতের রাত। বাহিরে তখন বেশ হিম পড়িয়াছে। আমি দাড়াইয়া দেখিলাম, মসজিদের অদুরে এক ব্যক্তি তন্দুরে আগুন দিতেছে। আমি মনে মনে ভাবিলাম, রাতটা তাহার নিকট কাটাইলে মন্দ হয় না। অতঃপর আমি নিকটে গিয়া তাহাকে সালাম করিলামৃ। কিন্তু সে আমার সালামের জবাব না দিয়া হাতের ইশারায় বসিতে বলিল। আমি তন্দুরে এক পাশে বসিয়া পড়য়ালাম। এইবার আমি লোকটির দিকে ভালভাবে লক্ষ করিয়া দেখতে পাইলাম, তাহার গায়ে একটি মোটা ছালার চট জড়ানো। আমার মনে হইল, লোকটি কি কারণে যেন ভয়ে আতঙ্কিত।
সে তন্দুর ফুকিতেছিল এবং কিছুক্ষণ পর পর ভয়ে ভয়ে ডানে-বায়ে তাকাইতেছিল।
লোকটির অবস্থা দেখিয়া আমার মনে কেমন যেন সন্দেহ হইতে লাগিল।
কিছুক্ষণ পর তন্দুরের আগুন জালানো শেষ হইলে সে আমরে দিকে ফিরিয়া বলিল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তুমি প্রথমে আমার সালামের জবাব দাও নাই কেন? সে বলিল আমি একজনের কর্মচারী। আমার আশঙ্কা হইতেছিল যে, তোমার সালামের জবাব দিতে গেলে হয়তো তাহার কাজে বঘœ ঘটিবে। এই কারনেই তখন তোমার সালামের জবাব দেই নাই। আমি আবার জিজ্ঞাসা করিলাম, তমি কিসের ভয়ে ডান দিকে ও বাম দিকে তাকাইতেছিল? সে বলিল , মৃত্যুর ভয়ে। জানি না সে ডান দিক হইতে আসিবে না বাম দিক হইতে আসিবে। লোকটি দৈনিক কাজের বিনিময়ে কত পারিশ্রমিক পায় জিজ্ঞাসা করিলে বলিল, এক দেরহাম এক দানেক।
আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তুমি ঐ অর্থ কি কর? সে বলিল , এক দানেক আমার নিজের পরিবার পরিজনের জন্য খরচ করি।
আমি জানিতে চাহিলাম, তুমি আল্লাহ্ পাকের নিকট এমন কোন দুআ করিয়াছ কি যাহা তিনি কবুল করেন নাই? সে বলিল, দীর্ঘ বিশ বৎসর যাবৎ আমি আল্লাহর দরবারে একটি দুয়া করিতেছি, কিন্তু এখনো উহা কবুল হয় নাই। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমর সেই দুয়াটি ক?ি সে জবাব দিল, আমি মূনিতে পাইয়াছি যে, ইবরাহীম বিন আদহাম নামে আরবে একজন জবরদস্ত বুজুর্গ আছে। আমি বিগত বিশ বৎসর যাবৎ আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করিতেছি, আমি যেন সেই বুজুর্গের সাক্ষাত পাই এবং সেই মহান বুজুর্গের সম্মুখেয় যেন আমার মৃত্যু হয়।
হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেন, লোকটির বক্তব্য শুনিয়া আমি তাহাকে বলিলাম, হে ভ্রাতা! তোমার বিশ বসরের সাধনা বিফলে যায় নাই। আজ তোমার সেই প্রার্থনাও কবুল হইয়াছে। আমার কথা শুনিবামাত্র সে লাফাইয়া উঠিয়া আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া চিৎকার করিয়া বলিল, আয় পরওয়ারদিগার! তুমি আমার মনের আশা পূরণ করিয়াছ। আমি তোমার অলীর সাক্ষাত পাইয়াছি, এখন তুমি আমার রুহ কবুল করিয়া লও।
হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ ) বলেন, আল্লাহ পাক তাহার দ্বীতীয় দুয়াটিও কবুল করিলেন; সঙ্গে সঙ্গে তাহার প্রাণহীন দেহটি মাটিতে ঢলিয়া পড়িল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কোরবানীর আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, কোরবানীর সূচনা।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড শিখুন।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী